মেসিদের বিপক্ষে সালাহবিহীন লিভারপুল

SHARE

‘লিভারপুল এমন এক দল, যাদের সামর্থ্য রয়েছে যেকোনো প্রতিপক্ষকে ভোগানোর। আমাদের জন্য প্রথম লেগের ফল ভালো হয়েছে। কিন্তু আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই যে, ফাইনালে যাওয়ার লড়াইটা এখনো উন্মুক্ত’-চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল প্রথম লেগের পর বার্সেলোনা কোচ এর্নেস্তো ভালভের্দের মূল্যায়ন। তাতে ৩-০ গোলে জয়ের আত্মতুষ্টি নেই; বরং সতর্কতা। ফাইনালে এক পা দিয়ে রেখেও শিষ্যদের পা মাটিতে রাখার চেষ্টা।

তা আজ অ্যানফিল্ডে দ্বিতীয় লেগের আগের ছবিটা কি বদলেছে?

বার্সা ক্যাম্প থেকে হয়তো দাবি করা হবে, বদলায়নি। গেল মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে রোমার বিপক্ষে প্রথম লেগ ৪-১ গোলে জিতেও দ্বিতীয় লেগ ০-৩ গোলে হেরে ছিটকে পড়ার ক্ষতটা তো মুছে যায়নি। ভালভের্দে সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘ভুলে গেলে চলবে না, গত মৌসুমের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগেও আমাদের তিন গোলের অগ্রগামিতা ছিল; তবু আমরা ছিটকে গেছি। আমাদের তাই আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নেই।’

আত্মতুষ্টিতে না হয় ভুগল না বার্সেলোনা। কিন্তু ফাইনালে যাওয়ার ব্যাপারে প্রবল আত্মবিশ্বাসী হতেই পারে। প্রথম কারণ প্রথম লেগের ফল। পরের কারণ, ওই ম্যাচের পরের ঘটনাপ্রবাহ। ইনজুরির কারণে লিভারপুলের ত্রিফলার দুজন মো সালাহ ও রবের্তো ফিরমিনো যে আজ খেলতে পারছেন না! তুলনায় বার্সেলোনার ওসমান দেম্বেলের না খেলা আর কি!

কুঁচকির ইনজুরিতে বেশ কিছুদিন ধরে ভুগছিলেন ফিরমিনো। যে কারণে বার্সার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের প্রথম একাদশেও ছিলেন না। খেলেননি লিগে নিউক্যাসলের বিপক্ষে ম্যাচে। অ্যানফিল্ডের দ্বিতীয় লেগে এই ব্রাজিলিয়ানের না খেলার দুঃসংবাদ আগেই পেয়েছে লিভারপুল। আর নিউক্যাসলের বিপক্ষে মাথায় আঘাত পেয়ে এবার দুঃসংবাদের মাত্রা দ্বিগুণ করে সালাহও বাদ। কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের কণ্ঠে তাই অনুমেয় হতাশা, ‘এটি মাথায় আঘাতের ব্যাপার। এর অর্থ ওকে খেলার অনুমতি দেওয়া হবে না, ব্যস! মো ভালোই আছে। কিন্তু সে ভালোটা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দিক থেকে যথেষ্ট নয়। খেলার জন্য মরিয়া ছিল ছেলেটি; কিন্তু এখন ওকে ছাড়াই আমাদের খেলতে হবে।’ ত্রিফলার সালাহ-ফিরমিনো নেই; আছেন শুধু সাদিও মানে। অথচ ০-৩ গোলে পিছিয়ে থাকা দ্বৈরথে এ ত্রয়ীকে কতটা প্রয়োজনই না ছিল লিভারপুলের!

ক্লপ তবু হাল ছাড়ছেন না। ঘোষণা দিয়েছেন লড়াইয়ের, ‘বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই স্ট্রাইকারকে আমরা পাচ্ছি না কাল (আজ) রাতে। এদিকে ফাইনালে উঠতে হলে ৯০ মিনিটের মধ্যে বার্সেলোনাকে চার গোল দিতে হবে। কাজটি মোটেই সহজ না। কিন্তু মাঠে যতক্ষণ ১১ জন থাকবে, আমরা চেষ্টা করে যাব।’ লিভারপুলের সে স্বপ্নের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিতে পারে বার্সেলোনার গোল। লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেসদের গোলবঞ্চিত রাখা তো চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। আর আজ তাঁরা এক গোল দিলেও অ্যাওয়ে গোলের হিসাব-নিকাশে লিভারপুলকে তখন দিতে হবে পাঁচ গোল। সালাহ-ফিরমিনোকে নিয়েও সেটি বড্ড কঠিন; তাঁদের ছাড়া তো অসম্ভবের কাছাকাছি।

কিন্তু চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছে লিভারপুল। নিজেরা গোল করার পাশাপাশি বার্সাকে গোলবঞ্চিত রাখার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন কোচ ক্লপ, ‘অ্যানফিল্ড যে রোমাঞ্চে টগবগ করবে, তা আমি বেশ বুঝতে পারছি। সেটি এমনকি আমরা গোল করার আগেই। তবে আমাদের তো শুধু গোল করলে চলবে না, বার্সেলোনাকেও গোলবঞ্চিত রাখতে হবে। অমনটা খুব বেশি ম্যাচে দেখা যায় না। আমরা তাই জানি, কতটা কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।’ চ্যালেঞ্জটা আরো বেড়ে যাচ্ছে প্রথম লেগের পরের আরেক ঘটনায়। যেখানে স্প্যানিশ লিগ জয় নিশ্চিত হওয়ায় সপ্তাহান্তের লিগ ম্যাচে প্রথম একাদশের ১১ জনকেই বিশ্রাম দিয়েছিলেন বার্সা কোচ ভালভের্দে। উল্টো দিকে ২৯ বছরের মধ্যে প্রথম ইংলিশ লিগ শিরোপা জয়ের জন্য নিউক্যাসলের বিপক্ষে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপানোর বিকল্প ছিল না লিভারপুলের। তাতে ৩-২ গোলের রুদ্ধশ্বাস জয় পেয়েছে বটে, তবে সে জন্য শক্তিক্ষয় কম হয়নি। এটি পার্থক্য গড়ে দিতে পারে বলে মানছেন ক্লপ, ‘আমাদের অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আছে। কাল (আজ) যেমন ছয় দিনের মধ্যে তৃতীয় ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি। ওদিকে বার্সেলোনা শনিবারের লিগ ম্যাচে ১১ জনকেই বদল করিয়ে খেলিয়েছে। এটি অনেক বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।’

বাজির পাল্লা তাই প্রবলভাবে ঝুঁকে বার্সেলোনার দিকে। কোনো কিছুই নেই লিভারপুলের পক্ষে। দারুণ এক মৌসুম কাটিয়েও ট্রফিশূন্য থাকার আশঙ্কায় ইংলিশ দলটি। সেটি অবশ্য বিষণ্ন করতে পারছে না কোচ ক্লপকে, ‘সমর্থকদের সঙ্গে মিলে দীর্ঘ এক মৌসুম কাটালাম। সেটিকে আরেকটু প্রলম্বিত করার (চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে উঠতে পারলে) ছোট্ট এক সুযোগ তো রয়েছে। সেটি না হলেও নিজেদের মাঠে শেষ দুটি ম্যাচ তো খেলব। তাতে অবিশ্বাস্য এই মৌসুমের উদ্‌যাপন করা উচিত; মাঠের ভালো পারফরম্যান্সে আর গ্যালারির খুব খুব ভালো পারফরম্যান্সে।’

এ দুয়ের যোগসূত্রে অ্যানফিল্ডে কত হিরণ্ময় ইউরোপিয়ান রাতের জন্ম হয়েছে! সেটিই একমাত্র ভয় বার্সেলোনার। সেটিই একমাত্র ভরসার জায়গা লিভারপুলের।
সূত্র: এএফপি