আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরো শক্ত অবস্থান নিতে বলেছেন বিএনপিসহ চারটি দলের নেতারা। তারা মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে রাত ১১টায় আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দুটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমটা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার ক্ষেত্রে সরকার যেন আরো শক্ত অবস্থান নেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের কিছুটা ঘাটতি আছে, সে কথাও তারা বলেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনপ্রক্রিয়ার দিকে সরকারকে সুষ্ঠুভাবে অগ্রসর হওয়া উচিত।
মঙ্গলবার রাত ৯টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বৈঠকটি শুরু হয়। এতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন ও যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন অংশ নেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, সি আর আবরার, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও মো. মাহফুজ আলম। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, বৈঠকে সম্প্রতি গোপালগঞ্জে সহিংসতা এবং মঙ্গলবার সচিবালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর এবং মাইলস্টোন কলেজে বিক্ষোভসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়। সব দলের নেতারা একটা বিষয়ে একমত যে সরকার দুর্বল আচরণ করছে। সরকারকে আরো শক্তিশালী আচরণ করা দরকার। গোয়েন্দা ব্যর্থতা চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় করতে হবে।
বৈঠক-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা করা হলে অনেক সমস্যা এমনিতে কমে যাবে।
আর জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বলেছেন, এখনো বহু অপরাধী ধরা পড়েনি। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা দরকার। না হলে নানা রকম ঝুঁকি তৈরি হবে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বললে তার ভালো লাগে। এ সময় রাজনৈতিক নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ডাকলেই তারা সাড়া দেবেন।
বৈঠক শেষে বিএনপি ও এনসিপির নেতারা যমুনার বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
পরে ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার ঐক্য আরো দৃশ্যমান করার কথা বলেন। এতে মানুষের মধ্যে স্বস্তির ভাব আসবে। এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলেছেন যে তাদের মধ্যে ঐক্য আছে। এর উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, যখনই প্রধান উপদেষ্টা ডাক দেন, তখনই তারা এসে হাজির হন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে নিয়মিত গিয়ে কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছে, ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে তাদের মধ্যে কোনো রকম মতভিন্নতা, মতবিরোধ নেই। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন, রাজনীতির মাঠে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে কথা বলার বিষয়টি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ।
বৈঠক শেষে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, দেশে পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চলছে। গোয়েন্দা ও প্রশাসনিক কিছু দুর্বলতা রয়েছে। এসব দুর্বলতা চিহ্নিত করার জন্য তারা প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। তারা বলেছেন, সরকারের উচিত প্রশাসনকে আরও কঠোর করা এবং নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রাখা, যাতে যেকোনো ঘটনা ঘটার আগেই সঠিক তথ্য পাওয়া যায়।
ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সচিবালয়সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো অতীতে এমন নিরাপত্তাহীন অবস্থায় দেখা যেত না। কিন্তু বর্তমানে একাধিকবার সচিবালয় অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা রয়েছে কি না, তা সরকারকে তদন্ত করে দেখতে হবে। তিনি প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান।