ভারতের রাজধানী দিল্লির কাছাকাছি একটি শহরে মানসিক প্রতিবন্ধী এক মহিলাকে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। তবে শুধু ধর্ষণ বা হত্যাকাণ্ডের মধ্যে থেমে থাকেনি হামলাকারীরা।
ধর্ষণের পর তারা ওই প্রতিবন্ধী নারীর দেহ ছিন্ন ভিন্ন করে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে যায়। এমনকি তার ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক মৃদুলা মুখার্জী বলছিলেন, “এটা শুধু সাধারণ ধর্ষণের ঘটনা নয়। এই নৃশংসতার মধ্যে থেকে সমাজের লুকিয়ে থাকা একটি রূপেরই প্রতিফলন। যারা এই কাণ্ডে ঘটিয়েছে তাদের কোনো শিক্ষা নেই, সামাজিক বা নৈতিক মূল্যবোধ নেই। তার ওপর নিজেদের জীবনের নানান অপ্রাপ্তির কারণে তাদের মধ্যে অনেকটাই ‘অমানুষিক’ মানসিকতা তৈরি হয়।”
২০১২ সালে দিল্লিতে চলন্ত বাসে এক মহিলাকে গণধর্ষণ করে হত্যার পর সারা ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সেখানেও ধর্ষণের পর নির্যাতিতা নারীর ওপর চরম শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। ধর্ষণ করার পরও সম্পূর্ণ অচেনা-অজানা একজন মহিলার শরীরের ওপর এই ধরনের নির্যাতন বা প্রতিহিংসা কেন?
“এই আক্রোশ কোনো ব্যক্তির ওপর নয়, এই আক্রোশ পুরো সমাজ ব্যবস্থার ওপর” বলেন অধ্যাপক মুখার্জী।
অধ্যাপক মুখার্জী মনে করেন, আইন কঠোর করা হলেও, পুলিশ বাহিনী থেকে শুরু করে প্রশাসনিক বিভিন্ন স্তরে যে পরিবর্তন দরকার সেটা দেখা যাচ্ছে না।
সে কারণে কমানো যাচ্ছে এই ধরনের নৃশংসতার ঘটনাও। দিল্লিতে বাসে ধর্ষণের ঘটনার স্মরণ করে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় দোষিরা বস্তিতে মানবিক জীবন যাপন করতো। লেখাপড়া ছিল না। সামাজিকতা ছিল না।
এর বিপরীতে সমাজের উঁচু শ্রেণীর প্রতি একধরনের ইর্ষাকাতর মনোভাব তাদের ভেতরে বাড়তে থাকে। যার প্রকাশ ঘটে এই ধরনের নৃশংস ঘটনার মধ্য দিয়ে।
গতবছর ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ভারতের নারী ও শিশুরা সবেচেয়ে অনিরাপদ উত্তর প্রদেশ এলাকায়।
জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, দিল্লী ও এর আশে-পাশে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজনের বসবাস। তার একটি প্রভাব থাকতে পারে।
এছাড়া এতিহ্যগতভাবে উত্তর ভারতের মানুষের মধ্যে কিছুটা আক্রমণাত্মক এবং রুক্ষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন। সূত্র: বিবিসি