সবাই যখন দিগ্বিদিক ছুটছে, যখন চারপাশ ধোঁয়া আর আগুনে ঘিরে রেখেছে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস, তখন একজন মানুষ যেন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিলেন অন্যদের জীবন রক্ষা করতে। তিনি শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী। নিজের প্রাণ দিয়ে বাঁচিয়ে দিলেন ২০টি নিষ্পাপ শিশুর জীবন।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন কলেজের প্রাইমারি সেকশনের একটি ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। বিকট শব্দ, বিস্ফোরণ, সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে ওঠে আগুন। ভেতরে তখন ক্লাস চলছিল। অধিকাংশের বয়স ৬ থেকে ১০ বছরের মধ্যে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকর্মীরা জানান, বিমান বিধ্বস্তের পর যখন চারদিক আগুন ও ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়, তখন শিক্ষিকা মাহেরীন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে শুরু করেন। তিনি দ্রুততার সঙ্গে আতঙ্কিত শিশুদের ভবন থেকে বের করার চেষ্টা করেন। তার এই দুঃসাহসিক প্রচেষ্টায় অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী অক্ষত বা সামান্য আহত অবস্থায় ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এই বীরত্বপূর্ণ কাজটি করতে গিয়ে তিনি নিজে আগুনের শিখার মধ্যে আটকা পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেন।
শিক্ষার্থী, সহকর্মী, অভিভাবক—সবাই স্তম্ভিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তার সাহসিকতার গল্প। কেউ বলছেন, তিনি একজন ‘জীবন্ত শহীদ’; কেউ বলছেন, তাঁর মতো মানুষই সমাজের আসল নায়ক।
সাদিয়া ইসলাম নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, “মাহেরীন চৌধুরী শুধু একজন শিক্ষক ছিলেন না, ছিলেন একজন অভিভাবক, একজন পথপ্রদর্শক, একজন সাহসিনী। তাঁর মৃত্যু আমাদের কাঁদায়, কিন্তু তাঁর কাজ আমাদের চোখ খুলে দেয়—শিক্ষক মানে শুধু পাঠ দেওয়া নয়, সত্যিকারের ভালোবাসা, দায়িত্ব আর ত্যাগের নামও শিক্ষক।”