কংগ্রেসের জন্য কি আরও একটা বড়সড় ধাক্কা অপেক্ষা করে আছে? শতাব্দীপ্রাচীন দলকে কি আরও একটা লজ্জার মুখে পড়তে হবে? কারণ, চেষ্টা চলছে, লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদ যেন কংগ্রেসের কাছে না-যায়৷ এমনিতে সংসদীয় রীতি মেনে সবথেকে বড় বিরোধী দলের নেতা এই সম্মান পেয়ে থাকেন৷ তবে নিয়ম হলো, সেই বিরোধী দলকে লোকসভার মোট সদস্যসংখ্যার অন্তত দশ শতাংশ আসন পেতে হয়৷ প্রাপ্ত আসনসংখ্যার নিরিখে কংগ্রেস সবথেকে বড় বিরোধী দল হলেও, দশ শতাংশ আসন কিন্ত্ত পায়নি৷ তবে যেহেতু জোট হিসেবে ইউপিএ দশ শতাংশ আসন পেয়েছে এবং এই জোট ছিল ভোটের আগে থেকেই, তাই বিরোধী দলনেতার পদ কংগ্রেসের কাছেই যাওয়ার কথা৷ কিন্ত্ত এখন চেষ্টা চলছে, জয়ললিতা, মমতা এবং নবীন পট্টনায়কের দল মিলে লোকসভায় একটা ব্লক তৈরি করুক৷ তা হলে সেই ব্লককেই বিরোধী দলনেতার পদ দেবেন স্পিকার৷ এ নিয়ে কথাবার্তাও শুরু হয়েছে৷ তবে আলোচনা যে খুব এগিয়েছে, এমনটা নয়৷
শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস যদি বিরোধী দলনেতার পদ পায়ও, তা হলেও সম্ভবত সোনিয়া বা রাহুল সেই পদ নেবেন না৷ বরং, কমল নাথের মতো কোনো নেতাকে এই পদ দেয়া হতে পারে৷ কারণ দুটো, তার দীর্ঘ দিনের সংসদীয় অভিজ্ঞতা এবং সব দলের সঙ্গে তার সম্পর্ক ও গ্রহণযোগ্যতা৷ কিন্ত্ত কংগ্রেস থেকে কে বিরোধী দলনেতার পদ পাবেন, এই প্রশ্নটার চেয়েও বড় হলো, এই পদ কংগ্রেস আদৌ পাবে কি?
কংগ্রেস নেতারা যুক্তি দেখাচ্ছেন, ২০১২-র সেপ্টেম্বরে পশ্চিমবঙ্গে যখন কংগ্রেস রাজ্য সরকার থেকে বেরিয়ে আসে, তখন তাদের বিধায়কসংখ্যা সিপিএমের থেকে বেশি ছিল৷ তখন কংগ্রেস বিরোধী দলনেতার পদ দাবি করে৷ কিন্ত্ত বিধানসভার অধ্যক্ষ রুলিং দেন, যেহেতু নির্বাচনপূর্ব জোট হিসেবে বামফ্রন্ট ভোটে লড়েছে, তাই বিরোধী নেতার পদ তাদের কাছেই যাবে৷ কিন্ত্ত বিজেপি নেতাদের দাবি, বিধানসভার নিয়ম লোকসভায় খাটবে না৷ এখানে লোকসভার অধ্যক্ষ চাইলেই নতুন ব্লককে এই পদ দিতে পারেন৷
এখানে আরও একটি বিষয় আছে৷ কংগ্রেস যাতে বিরোধী দলনেতার পদ না-পায়, সে ব্যাপারে বিজেপি যথেষ্ট উৎসাহী৷ কারণ, এমনিতেই কংগ্রেসের দুর্দশা, তার উপর কংগ্রেসকে আরও একটি ধাক্কা দেয়ার সুযোগ কিছুতেই ছাড়তে চাইবে না গেরুয়া শিবির৷ বরং, তারা এটাও দেখাতে চায়, কংগ্রেসের দুরবস্থাটা এখন এমনই যে, বিরোধী নেতার পদও তারা পাচ্ছে না৷
কিন্ত্ত বিরোধী ব্লক গড়তে কি এখন জয়ললিতা, নবীন ও মমতা হাত মেলাবেন? তৃণমূলের রয়েছে ৩৪ জন সাংসদ, জয়ার ৩৭৷ সে ক্ষেত্রে তারা হাত মেলালে সংখ্যাটা কংগ্রেসের চেয়ে বেশি তো হবেই, এমনকি ইউপিএ-র ৬০টি আসনকেও ছাপিয়ে যাবে ৷ আর নবীন মমতা-জয়ার সঙ্গে যোগ দিলে সংখ্যাটা দাঁড়াবে ৯১৷ জয়ললিতা ও নবীন হাত মেলালেও তাদের সম্মিলিত সংখ্যাটা ইউপিএ-র কাছাকাছি চলে আসবে৷ তৃণমূল কংগ্রেস এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে মুখ না-খুললেও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এবং ব্যারাকপুরের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী এই বিষয়গুলো নিয়ে মধ্যস্থতার জন্যই দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়েছেন৷ ভোটের ফল প্রকাশের পর রাজ্যসভায় যিনি জয়ললিতার এআইএডিএমকে-র নেতা, সেই ভি মৈত্রেয়ণের সঙ্গে নাকি কথাও হয়েছে মুকুলের৷
শেষ পর্যন্ত যদি সত্যিই এই তিনটি রাজনৈতিক দলের ব্লক হয় এবং লোকসভার অধ্যক্ষ তাদের হলে রুলিং দেন, তখন কংগ্রেসের দুরবস্থা নিশ্চিত ভাবেই বাড়বে৷ তবে প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী প্রথমেই এই ধরনের কাজে উৎসাহ জোগাবেন কি না, সে ব্যাপারেও প্রশ্নও রয়েছে৷- ওয়েবসাইট