ফরিদপুরে জমে উঠেছে পশুর হাট

SHARE

ঈদুল আযহাকে ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে ফরিদপুরের পশুর হাটগুলো। মৌসুমী ব্যবসা হিসাবে এই সুযোগেই একশ্রেনীর অসাধু ব্যবাসায়ীরা কৃত্রিম উপায়ে বেশি মুনাফার আশায় গরু মোটাতাজা করছে। আর অবাধে ভারত থেকে গরু আসায় লোকসানের আশঙ্কা করছে স্থানীয় খামারী।

মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানীর ঈদ। ঈদের আর মাত্র কিছু দিন বাকি। ঈদুল আজহার মূল উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কোরবানি করা। তাই এই সময়টাতে পশু কেনা বেচা হয় সবচেয়ে বেশি।image_98204_0

আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই ভিড় জমতে শুরু করেছে ফরিদপুরের পশুর হাটগুলোতে। হাটগুলোতে এই সময় ক্রেতাদের বেশিরভাই ব্যবসায়ী।

এখন কম দামে গরু কিনে ঈদের আগে ঢাকাসহ অন্যান্য হাটে বেশি দামে বিক্রি করাই তাদের উদ্দেশ্য। অভিযোগ রয়েছে, একশ্রেণীর অসাধু ও মৌসুমী ব্যাবসায়ীরা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কম দামে ছোট গরু কিনে মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট ও সার খাইয়ে কৃত্রিম উপায়ে গরু স্বাস্থ্যবান করে থাকে। যা গরুর জন্য ক্ষতিকর এবং ওই গরুর মাংস খেলে অসুস্থ হতে পারে মানুষও।

অন্যদিকে বৈধ ও অবৈধ পথে ভারত থেকে অবাধে আসছে গরু। এই দুই কারণে ফরিদপুরের প্রকৃত খামারীরা প্রতিবছরের মত এবারও পরেছেন দুশ্চিন্তায়। ভারত থেকে আসা গরুর দাম দেশী গরুর চেয়ে কম। সেক্ষেত্রে দেশি গরুর ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখোমুখি হবেন বলে তাদের আশঙ্কা।

ফরিদপুরের খামারী ও গরু ব্যাবসায়ীরা জানিয়েছে, যারা কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজা করে তাদের পশু যেন হাটে বিক্রি না হতে পারে সে ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট এবং কোরবানির ঈদের সময়টাতে ভারত থেকে গরু আমদানি না করারও দাবি জানিয়েছেন।

খামার মালিক হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আমি স্বল্প পরিসরে ১৯টি উন্নতজাতের গরু ক্রয় করে লালন পালন করি। আমি আমার খামারের গরুগুলোকে খড়, ঘাষ, খইল, গম ও ছোলার ভূসি খাইয়ে গরুগুলোকে লালন পালন করেছি। এখন আমার গরুগুলো সম্পূর্ণ বিক্রয়ের উপযোগী হয়ে উঠেছে।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এ গরুগুলো আমি লালন-পালন করেছি। ইতিমোধ্যেই বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু ব্যবসায়ীরা আমার খামারে এসে গরু গুলোকে দেখে গেছে দামও উঠেছে। আমার ১৯টি গরুর মূল্য ধরেছি এক কোটি ২০লাখ টাকা। ব্যাপারিরা আমার ১৯টি গুরুর দাম বলেছে ৮০লাখ টাকা।

তিনি আরও বলেন, আমি সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক খাবার খাইয়ে গরু লালনপালন করছি। গরু মোটা-তাজা করার জন্য আমি কোন রকম ওষুধ ও ইনজেকশন দেইনি। একধরনের অসাধু খামারি ওষুধ ও ইনজেকশন দিয়ে গরু মোটা-তাজা করে।

ওষুধ ও ইনজেকশন দিয়ে গরু মোটা-তাজা করলে ওই গরুর মাংস খেলে মানুষের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও ওষুধ দিয়ে মোটা-তাজা করলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে ওই গরু ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ওই গরু আর বাজারে বিক্রয় করতে পারবে না। কিন্তু আমার গরুগুলো কোরবানির সামনে বিক্রয় করতে না পারলেও কোনো অসুবিধা হবে না। কারণ আমার গরুগুলো স্বাভাবিক খাবার খেয়ে বড় হয়েছে।

খামার মালিক হাবিবুর রহমান বলেন, যে সকল শিল্পপতিরা কোরবানি করার জন্য গরু ক্রয় করবেন তারা আমার খামারের গরু ক্রয় করলে লাভবান হবেন। কারণ আমার খামারের গরু সম্পূর্ণ সূস্থ্য ও নিবাপদ। আমি বেছে বেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভাল জাতের নিখুত গরু সংগ্রহ করে লালন-পালন করে থাকি।

তিনি ঈদের আগে ভারত থেকে গরু আমদানি না করার জন্যও সরকারের আছে দাবি জানিয়েছেন।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানে গবাদি পশু’র এ্যানথ্রাক্স (তড়কা) রোগের কথা শুনা গেলেও ফরিদপুরের কোথায় এখনো এ রোগের লক্ষণ দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগে কর্মকর্তা ডা. হাসানুজ্জামান।

ফরিদপুরে কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজা করন হচ্ছে না বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা। কোরবানির পশুর হাটগুলোতে যাতে রোগাক্রান্ত পশু ক্রয় বিক্রয় না হয় সে ব্যাপারে মনিটরিং করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

মৌসুমী ব্যবসায় লাভবান হওয়ার জন্য যারা ক্ষতিকর ওষুধ-পত্র ব্যবহার করে গরু মোটাতাজা করছে। তাদেরকে রুখতে এখনই কার্যকর প্রদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন এমনটি মনে করছেন ফরিদপুরবাসী।