সদরপুর ইউএনও’র বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ

SHARE

আক্তারুজ্জামান সোহেল বারি : ফরিদপুর

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, পক্ষপাতমূলক ভূমিকা এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারী সদরপুর উপজেলার ভাষানচর ইউনিয়নের মধু মন্ডলের ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাসান প্রামানিক। তিনি তার পৈতৃক সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধে প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ফরিদপুর সমন্বিত কার্যালয়ে লিখিতভাবে দাখিল করেছেন।

আবুল হাসান অভিযোগে উল্লেখ করেন, তার পিতা মৃত আঃ জলিল প্রামানিক কর্তৃক ক্রয়কৃত মধু মন্ডলের ডাঙ্গী এলাকার ১৮নং শুকদেবনগর মৌজার একটি খণ্ড জমিতে দীর্ঘদিন ধরে “আয়শা সিদ্দিকা (রাঃ) মহিলা মাদরাসা” প্রতিষ্ঠিত। ২০২০ সালের ৭ জুলাই প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধিত হয় (রেজি. নম্বর: ফরিদ-৯৫৫)। প্রায় ৪০ বছর ধরে জমিটি দখল ও ব্যবহার করে আসলেও সম্প্রতি পলাশ চন্দ্র মন্ডল নামক এক ব্যক্তি মাদরাসার ভবন নির্মাণে বাধা প্রদান করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, পলাশ চন্দ্র মন্ডল প্রথমে ১৪৪ ধারায় মামলা দায়ের করলেও আদালত তা খারিজ করে দেন। এরপর তিনি ভূমি প্রতিকার ও প্রতিরোধ আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করেন যা বিচারাধীন। একইসাথে পলাশ মন্ডল ও তার অনুসারীরা মাদ্রাসার নির্মাণকাজে বাধা প্রদান ও চাঁদা দাবির অভিযোগে আবুল হাসানও আদালতের দ্বারস্থ হন।

ইউএনওর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
সবচেয়ে উদ্বেগজনক অভিযোগটি হলো ইউএনও জাকিয়া সুলতানার ভূমিকা নিয়ে। অভিযোগকারীর দাবি, মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ইউএনও আদালতের আদেশ ও আইনি প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে পলাশ মন্ডলের পক্ষে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ করেন। তিনি সরকারি সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জমি পরিমাপ না করেই একতরফাভাবে মাদরাসার নির্মাণাধীন ভবনসহ সম্পূর্ণ জমি পলাশ চন্দ্র মন্ডলের নামে বুঝিয়ে দেন এবং তার দিয়ে ঘিরে দেন।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী বলেন,
“আমি আদালতের রায়ের অপেক্ষায় ছিলাম। অথচ প্রশাসন আমার পক্ষে থাকা আইনগত প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে একজন দণ্ডিত রাজনৈতিক সুবিধাভোগীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এখন আমি ও আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছি।”

অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, পলাশ চন্দ্র মন্ডল অতীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে দলীয় দায়িত্বে ছিলেন এবং নানাবিধ সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। এমনকি ২০২৪ সালে আওয়ামী বিরোধী আন্দোলনের সময় সদরপুর থানায় হামলা ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন এবং জেলও খাটেন বলে অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে।

২০২৫ সালের জুলাই মাসে আবুল হাসান প্রামানিক এই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালকের বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন, সরেজমিনে তদন্ত করে ইউএনও’র আচরণ ও সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং অনেকেই প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

এ বিষয়ে পলাশ চন্দ্র মন্ডল জানান, ওই অংশে ৮২ শতাংশ জমি মধ্যে আমার কেনা ৬১.৫ শতাংশ, বাকীটা ওদের। পুরোটা কেন দখলে গেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদেরটা তারা ভোগ করবে আমারটা আমি। তবে তিনি চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

ইউএনও জাকিয়া সুলতানার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার পক্ষে কোন বক্তব্য দেওয়া সম্ভব না। আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান মোল্লা অসুস্থ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।