সোমবারের মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে আসুন

SHARE

আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবারের মধ্যে গ্রামীণফোনকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ফান্ডে এক হাজার কোটি টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ। আদালত আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন। আদালত গ্রামীণফোনের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেছেন, সোমবারের মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে আসুন। এরপর বাকি বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে। দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধে গ্রামীণফোনের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশ দেন আদালত। আদালত গ্রামীণফোনের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, বাংলাদেশের আদালতকে ছোট ভাববেন না। মনে রাখবেন, এটি দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ গত রবিবার গ্রামীণফোনের প্রতি এ নির্দেশ দিয়েছেন। গত বছরের ২৪ নভেম্বর দেওয়া আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে গ্রামীণফোনের করা রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদেশের সময় গ্রামীণফোনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন ও ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী। বিটিআরসির পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।

আদেশের পর ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত বলেছেন সোমবারের মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে আসতে। ওই দিন রিভিউ আবেদনের ওপর আদেশের জন্য দিন রেখেছেন আদালত। আমরা এখন এটা গ্রামীণফোনকে জানাব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতে বলেছি ৫০০ কোটি টাকা এক মাসে দেব। বাকিটা ছয় মাসে সমানভাবে দেব। কিন্তু আদালত আমাদের এই আবেদন গ্রহণ করেননি।’

গতকাল শুনানিতে গ্রামীণফোনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আপনারা দুই হাজার কোটি টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই টাকা পরিশোধ করা হলে বিটিআরসির মূল দাবির ৮৭ শতাংশই পরিশোধ করা হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘বিটিআরসির মূল দাবি দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আমরা মূল দাবির ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ৫৭৫ কোটি টাকা আগামী ১২ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিটিআরসিকে ৫০০ কোটি টাকা নিতে বলেছিলাম; কিন্তু তারা তা নেয়নি।’

এ সময় আদালত বলেন, কম টাকা নিয়ে যাবেন কেন? আপনারা তো আপিল বিভাগের আদেশ উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে এসে যদি বলতেন, তাহলেও আমরা বিবেচনা করতাম।

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে দিন। তাহলে সব টাকা ছয় মাসের মধ্যে আদায় হয়ে যাবে।

এ সময় আদালত গ্রামীণফোনের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি যদি এখন বেশি টাকা দেন, তাহলে পরবর্তী সময়ে সেটা তো অ্যাডজাস্ট করে নিতে পারবেন।

অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘বিটিআরসির দাবি করা টাকার পরিমাণ নিয়ে তো আপত্তিই আছে। এটা বিচারাধীন। আমরা মনে করছি, বিটিআরসি যে পরিমাণ টাকা দাবি করছে সে পরিমাণ টাকা পাবে না।’

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালত যদি মনে করেন টাকা পরিশোধ করার জন্য আরো দু-এক দিন সময় দেবেন, তাহলে সেটা দিতে পারেন।

এ পর্যায়ে গ্রামীণফোনের আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন চলতি মাসে ৫০০ কোটি টাকা দিতে রাজি হন। বাকি টাকা সমান কিস্তিতে পাঁচ মাসে পরিশোধের আবেদন জানান।

তখন আদালত বলেন, দুই হাজার কোটি টাকা দিলে সময় বাড়াব। তা না হলে সময় বাড়াব না। আদালত বলেন, আপনারা যদি মনে করেন বাংলাদেশের আদালত ছোট আদালত, এটা মনে করা ঠিক না। এটা দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

তখন গ্রামীণফোনের আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, এই সময়ের মধ্যে পুরো টাকা পরিশোধ করা সম্ভব না। আপনারা যা বলেছেন, তা জানানোর জন্য রবিবার পর্যন্ত আমাদের সময় দিন।

আদালত বলেন, কথা বলে লাভ নেই। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বাকি টাকা (এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা) দিয়ে দেবেন।

এ সময় অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘বাকি টাকা (এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা) পরিশোধ করতে ছয় মাসের কিস্তির সুযোগ চাচ্ছি।’ এরপর আদালত আদেশ দেন।

গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দাবি করে বিটিআরসির দেওয়া চিঠির কার্যকারিতার ওপর হাইকোর্ট গত বছরের ১৭ অক্টোবর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেন। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে বিটিআরসি আপিল বিভাগে আবেদন করে। এই আবেদনের ওপর শুনানিকালে গ্রামীণফোন আপাতত কত টাকা দিতে পারবে তা প্রথমে ওই বছরের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এবং পরবর্তী সময়ে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে আদালতকে জানানোর নির্দেশ ছিল। এ অবস্থায় গত বছরের ১৪ নভেম্বর গ্রামীণফোন আদালতকে জানায়, তারা শর্ত সাপেক্ষে ২০০ কোটি টাকা দিতে রাজি। পরে আপিল বিভাগ ২৪ নভেম্বর তিন মাসের মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করার নির্দেশ দেন।

এর আগে প্রায় ২৭টি খাতে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা (নিরীক্ষা আপত্তির দাবি) দাবি করে গ্রামীণফোনকে গত বছরের ২ এপ্রিল চিঠি দেয় বিটিআরসি। এই চিঠির বিরুদ্ধে ঢাকার নিম্ন আদালতে মামলা (মানি স্যুট) করে গ্রামীণফোন। মামলায় অর্থ আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চায় গ্রামীণফোন। কিন্তু গত বছরের ২৮ আগস্ট নিম্ন আদালত এ আবেদন খারিজ করে দেন। নিম্ন আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে গ্রামীণফোন। ওই আপিলটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে গ্রামীণফোনের কাছ থেকে টাকা আদায়ের ওপর দুই মাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেন। এই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত চেয়ে বিটিআরসি আপিল বিভাগে আবেদন করে। এ আবেদনে আপিল বিভাগ তিন মাসের মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দেন। এরপর গ্রামীণফোন রিভিউ আবেদন করে।

গ্রামীণফোনের বক্তব্য
‘আপিলেট ডিভিশনের আদেশের বিষয়ে আমরা অবগত। রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে আমরা প্রত্যাশিত ফলাফল পাইনি। এই মুহূর্তে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই।’