রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টায় ‘একটুও অগ্রগতি’ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার এই তথ্য জোনিয়েছেন। তবে ক্রেমলিনের এক সহযোগী বলেছেন, পুতিন আবারও জানিয়ে দিয়েছেন, মস্কো এই সংঘাতের ‘মূল কারণগুলো’ সমাধানে কাজ চালিয়ে যাবে। প্রায় এক ঘণ্টার ওই ফোনালাপে সাম্প্রতিক সময়ে কিয়েভে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহে যে বিরতি এসেছে, তা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন পুতিনের সহকারী ইউরি উশাকভ।
যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চেষ্টাগুলো ইতিমধ্যেই কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। এমনকি রিপাবলিকান দলের ভেতর থেকেও ট্রাম্পের ওপর চাপ বাড়ছে—তিনি যেন পুতিনকে আলোচনায় রাজি করাতে আরো কার্যকর ভূমিকা নেন। ফোনালাপ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলের এক উপশহরে একটি আবাসিক ভবনে রুশ ড্রোন হামলায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে বলে জানায় কিয়েভের কর্মকর্তারা। এতে বোঝা যাচ্ছে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।
কিয়েভে রয়টার্সের সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, রাজধানীর আকাশে ড্রোন প্রতিরোধে বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলোর সঙ্গে ব্যাপক গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এদিকে, দেশের পূর্বাঞ্চলে রুশ গোলাবর্ষণে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ওয়াশিংটনের এক বিমানঘাঁটিতে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তার (পুতিনের) সঙ্গে কোনো অগ্রগতি করতে পারিনি।’ এরপর তিনি আইওয়ায় একটি নির্বাচনী প্রচারণা অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
ইতোমধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ডেনমার্কে সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি শুক্রবারের মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার আশা করছেন, যাতে সাম্প্রতিক অস্ত্র সরবরাহের স্থগিতাদেশ নিয়ে আলোচনা করা যায়। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি সরবরাহ বন্ধ করিনি। কিন্তু বাইডেন এত বেশি অস্ত্র পাঠিয়েছেন যে আমাদের নিজেদের প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।’
ট্রাম্প আরো বলেন, ‘আমরা এত বেশি অস্ত্র দিয়েছি যে এখন আমাদের নিজেদের জন্য চিন্তা করতে হচ্ছে।’ এদিকে পেন্টাগনের কিছু সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের মজুদ কমে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু অস্ত্র পাঠানো আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।
এই অবস্থায় ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার অভিযান এবং বেসামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা আরো বাড়ছে।
পুতিন আবারও দাবি করেছেন, ‘মূল কারণগুলো—যেমন ন্যাটো সম্প্রসারণ এবং ইউক্রেনে পশ্চিমাদের সমর্থন—সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ হবে না। মস্কো চায় ইউক্রেনসহ পূর্ব ইউরোপের রাজনীতিতে তাদের প্রভাব আরো বাড়াতে, ন্যাটো কর্মকর্তারা এমনটাই বলে আসছেন।’
এই অস্ত্র সরবরাহের বিরতিতে ইউক্রেন হতবাক হয়ে পড়েছে এবং ট্রাম্পের বর্তমান অবস্থান নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠছে। কারণ কয়েকদিন আগেই তিনি জানিয়েছিলেন, কিয়েভের জন্য প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ছাড় করার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যেই ইউক্রেন বুধবার কিয়েভে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত দূতকে তলব করে সামরিক সহায়তার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছে এবং বলেছে, অস্ত্র সরবরাহে বিরতি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলবে।
প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর ইউক্রেন অনেকটাই নির্ভরশীল—বিশেষ করে দ্রুতগামী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে। ক্রেমলিনের উপদেষ্টা উশাকভ বলেছেন, মস্কো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী থাকলেও শান্তি আলোচনা কেবল মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে হওয়া উচিত। তিনি আরো জানান, ফোনালাপে ট্রাম্প ও পুতিন মুখোমুখি বৈঠক নিয়েও কোনো আলোচনা করেননি।
সূত্র : রয়টার্স