রাশিয়া আফগানিস্তানের নতুন রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছে বলে বৃহস্পতিবার দেশটি জানিয়েছে। এর ফলে তালেবান শাসিত আফগানিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র রাশিয়া। এখন পর্যন্ত কোনো দেশই তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান এবং পাকিস্তান কাবুলে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছে, যা আংশিক স্বীকৃতির ইঙ্গিত বহন করে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মস্কো কাবুলের সঙ্গে নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম ও মাদকবিরোধী লড়াইয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছে। বিশেষ করে জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি ও অবকাঠামো খাতে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
রাশিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘ইসলামী আমিরাত আফগানিস্তানের সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান দ্বিপক্ষীয় উৎপাদনশীল সহযোগিতার বিকাশে গতি আনবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাশিয়ার এই সাহসী পদক্ষেপকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখি।
ইনশাআল্লাহ, এটি অন্যদের জন্যও দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।’
রাশিয়ার এই পদক্ষেপ তালেবান সরকারের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা কাটাতে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণের বিষয়, কারণ যুক্তরাষ্ট্র আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ সম্পদ জব্দ করেছে এবং তালেবানের শীর্ষ নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে, ফলে আফগানিস্তানের ব্যাংকিং খাত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার বাইরে চলে গেছে।
ইতিহাস ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি
রাশিয়ার আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জটিল ও রক্তক্ষয়ী।
১৯৭৯ সালে সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তানে প্রবেশ করে এবং মুজাহিদদের সঙ্গে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত বাহিনী দেশটি ছেড়ে যায়। তবে ১৫ হাজার সোভিয়েত সেনা নিহত হয়।
২০০৩ সালে রাশিয়া তালেবানকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করেছিল, তবে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। এর পর থেকেই তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে মস্কো।
২০২২ সাল থেকে আফগানিস্তান রাশিয়া থেকে গ্যাস, তেল ও গম আমদানি করছে।
তালেবান বর্তমানে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে মস্কোর বাইরে একটি কনসার্ট হলে হামলায় ১৪৯ জন নিহত হলে, আইএস খোরাসান (আইএসআইএস-কে) দায় স্বীকার করে। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত এই হামলার পেছনে আইএস খোরাসান রয়েছে।
তবে তালেবান সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথে প্রধান বাধা রয়ে গেছে নারীদের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়। তালেবান সরকার মেয়েদের জন্য স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে এবং নারীদের পুরুষ অভিভাবক ছাড়া চলাচলের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। তারা দাবি করে, ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী নারীদের অধিকার রক্ষা করা হচ্ছে। রাশিয়ার এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। এটি দেখে এখন বিশ্ববাসী অপেক্ষায় থাকবে—আর কোনো দেশ কি তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবে কি না?
সূত্র : রয়টার্স