রোদ উঠেছে আজ, শীতজনিত রোগে হাসপাতালে ভিড়

SHARE

কুয়াশা কেটে রোদের দেখা মিলেছে। আজ রবিবার বেশ সকাল থেকেই রোদ্রজ্জ্বল দিনের শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হামিদ গতকালই কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, রবিবার রোদের কারণে ঠাণ্ডা কিছুটা কম অনুভূত হতে পারে। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা তেমন একটা নেই। গতকাল দুপুরের দিকে কুয়াশার চাদর ভেদ করে উঁকি দেয় মিষ্টি রোদ। যদিও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।

এদিকে, মাঝে এক দিন তাপমাত্রা প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেও গতকাল শনিবার সকাল থেকেই তা আবার নিচে নেমে যায়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আজ রবিবার রাজশাহী, রংপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোনো কোনো এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে।

শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দিন দিন বেড়েই চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ২৯৬টি উপজেলায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে আরো চার হাজার ১৯৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গত ১ নভেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতজনিত রোগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৭৮ হাজার ৭৫১ জন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে স্বাভাবিক লঘুচাপের প্রভাবে দেশের অনেক এলাকার আকাশই মেঘাচ্ছন্ন কয়েক দিন ধরে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টিপাতও হয়েছে। ওই দিন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অবশ্য গতকাল সেখানে তাপমাত্রা নেমে যায় ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ২ দিনাজপুরে।

আমাদের দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল তাপমাত্রা কম থাকলেও দেখা মিলেছে সূর্যের, ছিল না তেমন কুয়াশা। দিনে সূর্যের তাপ থাকলেও সন্ধ্যা নামতেই অনুভূত হতে থাকে অসহনীয় ঠাণ্ডা। এতে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে।

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া কার্যালয়ের পর্যবেক্ষক তোফাজ্জল হোসেন জানান, গতকাল ভোরে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সকালে সূর্য উঠায় এবং কিছুটা প্রখরতা থাকায় সাড়ে ৯টায় তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা কিছুটা উঠানামা করবে বলেও জানান তিনি।

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, শীতের তীব্রতা বেড়েছে। গতকাল সকাল ১১টার দিকে সূর্যের দেখা মেলে। কয়েক ঘণ্টা সূর্যের তাপ ছিল। এতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে জনমনে। তবে বিকেল গড়াতেই আবার শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকে। হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গতকাল দুপুরের পর সূর্যের মুখ দেখা গেলেও দিনভর ছিল হিমেল হাওয়া। অব্যাহত ঘন কুয়াশার কারণে কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছে সরিষা ও বোরো ধানের চারা। ব্রহ্মপুত্র-যমুনাসহ অন্য নদ-নদীতে নৌ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে চরাঞ্চলের মানুষ বিপাকে পড়েছে। শীতবস্ত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ছিন্নমূল মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, হাঁপানি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৪,১৯৬ জন : গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ২৯৬টি উপজেলায় শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬৬৮ জন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসে এক হাজার ৬৩৯ জন। শীতজনিত অন্যান্য রোগে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৮৮৯ জন।

শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া, ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলা, গরম কাপড়চোপড় ব্যবহার, গরম খাবার ও গরম পানি ব্যবহার করা, প্রয়োজনমতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।