জলবায়ু ক্ষতিপূরণ আদায়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে বাংলাদেশ : আইসিজে

SHARE

জলবায়ু ঝুঁকিতে ফেলা দায়ী রাষ্ট্রগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া বাধ্যতামূলক বলে রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। বুধবার (২৩ জুলাই) নেদারল্যান্ডসের হেগ থেকে দেওয়া এক ঐতিহাসিক রায়ে এসব কথা বলা হয়।

জাতিসংঘের এ সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, দেশগুলোর জলবায়ুসংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি ও দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতা এখন থেকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ক্ষতিপূরণ আদায়ে দায়ী রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে।

আইসিজের এই রায় বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য এটি একটি বৈপ্লবিক সুযোগ বলে মনে করছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। কারণ এ রায় ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের ক্ষতিপূরণ দাবি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করবে।

সেন্টার ফর ক্লাইমেট জাস্টিস-বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও জলবায়ু আইনজীবী হাফিজুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘এই রায় বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এখন আইনি ও নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এটি বাংলাদেশ ও অন্যান্য জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য বড় ধরনের সুযোগ।

রায়ে আইসিজে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী সকল কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে। বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন একটি ‘অস্তিত্ব সংকট’, যা সব জীবের জন্য হুমকি তৈরি করছে। রাষ্ট্রগুলোকে অবশ্যই কার্বন নির্গমন হ্রাস, বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তির বাস্তবায়ন এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী ও পরিবেশ সুরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

এই প্রথমবারের মতো, বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন, ব্যবহার, এ খাতে ভর্তুকি বা অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিকভাবে বেআইনি কাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
আর যদি জলবায়ু ক্ষতির প্রতিকার দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে দায়ী রাষ্ট্রগুলো বাধ্যতামূলকভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে।

২০২৩ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবে ১৮টি দেশের নেতৃত্বে (বাংলাদেশসহ) আইসিজেকে এই উপদেশমূলক রায় দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। এরপর ২০২৪ সালে ৯৬টি রাষ্ট্র ও ১১টি আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখিত ও মৌখিক উপস্থাপনার মাধ্যমে আদালতে তাদের অবস্থান তুলে ধরে।

এই রায় আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক না হলেও, এর রাজনৈতিক ও নৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। এটি জলবায়ু-সংক্রান্ত মামলাসমূহে শক্তিশালী আইনি ভিত্তি প্রদান করবে এবং ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার আদায়ে নতুন দিশা দেখাবে।

ইউথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, ‘সামনের সারির জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের দাবি যা আন্তর্জাতিক আইনি স্বীকৃতি পেল। জলবায়ু অপরাধের জন্য এখন দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’

এই আন্দোলনের সূচনা হয় ২০১৯ সালে, যখন প্যাসিফিক আইল্যান্ড স্টুডেন্টস ফাইটিং ক্লাইমেট চেঞ্জ এবং ওয়ার্ল্ডস ইয়ুথ ফর ক্লাইমেট জাস্টিস নামে দুইটি যুব সংগঠন এই দাবি উত্থাপন করে। বাংলাদেশসহ ১ হাজার ৫০০টিরও বেশি সিভিল সোসাইটি সংস্থা এতে সমর্থন দেয়।