রাশিয়া-ইউক্রেনের পাল্টাপাল্টি ড্রোন হামলায় নিহত ৫

SHARE

মস্কো ও কিয়েভের চালানো ড্রোন হামলায় বৃহস্পতিবার রাশিয়ায় দুজন ও ইউক্রেনে তিনজন নিহত হয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যুদ্ধবিরতি নিয়ে তৃতীয় দফার সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষ হয়।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ অঞ্চলে একটি বাড়িতে রাশিয়ার হামলার পর এদিন ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। চেরকাসি ও জাপোরিঝঝিয়া শহরেও কয়েকজন আহত হয়েছে।
কৃষ্ণ সাগরের বন্দরনগরী ওডেসায় ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান বিখ্যাত প্রিভোজ বাজারেও হামলা হয়েছে। গত রাতে চালানো ওই হামলায় শহরজুড়ে একাধিক স্থানে আগুন লাগে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ ছাড়া সকালে খারকিভ শহরে আরেকটি রুশ হামলায় আরো ৩৩ জন আহত হয়।

অন্যদিকে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটির দক্ষিণের ক্রাসনোদার অঞ্চলের সোচি শহরে ইউক্রেনের চালানো ড্রোন হামলায় দুজন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছে।

এদিকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদল বুধবার সন্ধ্যায় ইস্তাম্বুলে যুদ্ধবিরতি নিয়ে তৃতীয় দফার বৈঠকে মিলিত হয়। আলোচনার শুরুতেই দুই পক্ষই বিশেষ কোনো অগ্রগতির আশা করেনি। ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের প্রধান জানান, আলোচনাটি মাত্র এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল। অন্যদিকে রুশ প্রতিনিধিদলের প্রধান ভ্লাদিমির মেদিনস্কি জানান, দুই পক্ষ এক হাজার ২০০ যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে সম্মত হয়েছে এবং রাশিয়া নিহত তিন হাজার ইউক্রেনীয় সেনার মরদেহ কিয়েভে ফেরত পাঠাতে চেয়েছে।

এ বৈঠকে দীর্ঘ চার বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ থামাতে কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ করেছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমরা কোনো বড় অগ্রগতির প্রত্যাশা করিনি। এখানে অগ্রগতি কঠিন।’

বৈঠকের আগে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের প্রধান রুস্তেম উমেরভ জানিয়েছিলেন, আগস্টের মধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সরাসরি বৈঠকের আয়োজনই কিয়েভের প্রধান লক্ষ্য।
কিন্তু পেসকভ সময়ের আগেই এ প্রস্তাবকে তোলা হয়েছে দাবি করে বলেন, ‘তারা (ইউক্রেন) ঘোড়ার আগেই গাড়ি টানতে চাইছে।’ এমন বৈঠক আয়োজনের আগে আরো অনেক কাজ বাকি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রথম দুই দফার যুদ্ধবিরতি আলোচনা হয় মে ও জুনে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে। তিনি বারবার এই ‘ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ’ থামাতে চান বলে জানিয়েছেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প ৫০ দিনের একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের জন্য, এই সময়ের মধ্যে যদি যুদ্ধ বন্ধ না হয়, তবে তিনি মস্কোর ওপর ‘চরম শুল্ক’ আরোপের হুমকি দিয়েছেন।

শান্তির বিষয়ে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। তারা চায় যুদ্ধের ‘মূল কারণগুলো’ দূর করতে হোক। এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা, দেশটির সামরিক শক্তি বড় আকারে কমানো ও ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ। কিন্তু কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্রদের কাছে এসব শর্ত গ্রহণযোগ্য নয়।

আলোচনার পর বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যমে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমরা কূটনৈতিক পথকে কার্যকর করতে সব কিছু করব। কিন্তু রাশিয়ারই এই যুদ্ধ শেষ করতে হবে, যা তারাই শুরু করেছিল।’