কাতারে হামাস নেতাদের লক্ষ করে চালানো ইসরায়েলি বিমান হামলার জন্য প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল সানির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। হামলাটি হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্বের এক গোপন বৈঠককে লক্ষ্য করে চালানো হলেও, তাতে কাতারের একজন নিরাপত্তারক্ষীসহ হামাসের কয়েকজন নিম্নপর্যায়ের সদস্য নিহত হন। মূল টার্গেটকৃত শীর্ষস্থানীয় নেতারা প্রাণে রক্ষা পান।
এই ঘটনার পর কাতার গাজা যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েল-হামাস মধ্যস্থতায় যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিল, তা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়।
নেতানিয়াহুর এই দুঃখপ্রকাশের ফোনালাপটি হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে। ওভাল অফিস থেকে একটি যৌথ বৈঠকের সময়। ফোনালাপের পরপরই হোয়াইট হাউজ গাজা যুদ্ধ বন্ধে একটি শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করে। ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানান, ইসরায়েল ও আরব বিশ্ব এই পরিকল্পনাকে মেনে নিয়েছে।
হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে জানায়, ফোনালাপে নেতানিয়াহু গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি হামাসের বিরুদ্ধে চালানো ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ভুলক্রমে একজন কাতারি সেনা নিহত হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘জিম্মি আলোচনার সময় হামাস নেতাদের লক্ষ্য করতে গিয়ে ইসরায়েল কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। এটি দুঃখজনক এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না।
’
ফোনালাপে কাতারের প্রধানমন্ত্রী এই আশ্বাসকে স্বাগত জানান এবং বলেন, ‘কাতার এখনো আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে আগ্রহী।’ কাতার পরে একটি বিবৃতিতে জানায়, তারা সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের ঘটনাকে বরদাশত করবে না, তবে গাজা যুদ্ধের অবসানে মার্কিন উদ্যোগের আওতায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
নেতানিয়াহুর দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নেতানিয়াহু আল সানিকে বলেন, ‘ইসরায়েলের ভবিষ্যতে কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের কোনো পরিকল্পনা নেই। আমি এই প্রতিশ্রুতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও দিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, ইসরায়েলের লক্ষ্য ছিল শুধুই হামাস, কাতার নয়।
’
নেতানিয়াহু স্বীকার করেন, ইসরায়েলের সঙ্গে কাতারের বেশ কিছু বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। যেমন মুসলিম ব্রাদারহুডকে কাতারের সমর্থন, আল জাজিরার মাধ্যমে ইসরায়েলবিরোধী প্রচার এবং পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েলবিরোধী আবেগ ছড়ানোর প্রসঙ্গ। তবে তিনি ট্রাম্পের উদ্যোগে একটি ত্রিপক্ষীয় ফোরাম গঠনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান, যেখানে এই মতবিরোধ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
এই ক্ষমাপ্রার্থনা নেতানিয়াহুর পূর্বের অবস্থান থেকে এক নাটকীয় পরিবর্তন। এর আগে তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, হামাস যেখানেই থাকুক, ইসরায়েলের হামলার অধিকার রয়েছে। এমনকি ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি কাতারে হামলার তুলনা করেছিলেন পাকিস্তানে মার্কিন অভিযানে ওসামা বিন লাদেন হত্যার সঙ্গে।
সূত্র : টাইমস অব ইসরায়েল।