চীনে সামরিক শুদ্ধি অভিযান: ৯ শীর্ষ জেনারেল বরখাস্ত, রাজনৈতিক বার্তা এবং দুর্নীতি দমন

SHARE

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি একযোগে দেশটির নয় শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে এবং তাদের সামরিক বাহিনী থেকে পদচ্যুত করা হয়েছে। এই পদক্ষেপকে বিশ্লেষকরা কয়েক দশকের মধ্যে চীনের সামরিক বাহিনীতে সবচেয়ে বড় ঘটনাগুলোর একটি হিসেবে মনে করছেন।

চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বরখাস্ত হওয়া এই ৯ কর্মকর্তা গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও দায়িত্বসংক্রান্ত অপরাধের সন্দেহভাজন। অধিকাংশই তিন তারকা জেনারেল এবং কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন, যেখানে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামরিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই পদক্ষেপটি চীনের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান হিসেবে চিহ্নিত হলেও, অনেক বিশ্লেষক এটি রাজনৈতিক শুদ্ধিকরণের অংশ হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে শি চিনপিংয়ের নেতৃত্বে আসন্ন কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের আগে এমন একটি পদক্ষেপ রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বরখাস্ত হওয়া ৯ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা:

হি ওয়েইডং – সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের (সিএমসি) ভাইস চেয়ারম্যান

মিয়াও হুয়া – সিএমসির রাজনৈতিক বিভাগের পরিচালক

হে হংজুন – সিএমসির রাজনৈতিক বিভাগের নির্বাহী উপপরিচালক

ওয়াং জিউবিন – সিএমসির জয়েন্ট অপারেশন কমান্ড সেন্টারের নির্বাহী উপপরিচালক

লিন জিয়াংইয়াং – ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডার

কিন শুতং – সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার

ইয়ুআন হুয়াজি – নৌবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার

ওয়াং হৌবিন – রকেট ফোর্স কমান্ডার

ওয়াং চুনিং – আর্মড পুলিশ ফোর্স কমান্ডার

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, হি ওয়েইডং, যিনি চীনের সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা ছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের পর দ্বিতীয় শীর্ষ পদে ছিলেন, তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত মার্চ থেকে জনসম্মুখে তাকে দেখা যায়নি, যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছিল। তিনি শুধু সিএমসিরই নয়, কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্যও ছিলেন, এবং তিনি প্রথম পলিটব্যুরো সদস্য হিসেবে এ ধরনের তদন্তের মুখোমুখি হচ্ছেন।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই ৯ ব্যক্তি দলের শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করেছেন এবং গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার সন্দেহ রয়েছে।” তাদের বিরুদ্ধে সামরিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এবং এটি চীনের সামরিক বাহিনীর দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে বিবেচিত হবে।

এছাড়া, সামরিক শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে চীনে এর আগেও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, যেমন দুই সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংঘে এবং লি শাংফু, এবং সম্প্রতি রকেট ফোর্সের শীর্ষ কর্মকর্তাদেরও সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, শি চিনপিংয়ের শুদ্ধিকরণ অভিযানে একদিকে যেমন দুর্নীতি দমন করা হচ্ছে, তেমনি পার্টি ও সামরিক বাহিনীতে শক্তি প্রদর্শন করে শি নিজের ক্ষমতা আরো সুসংহত করতে চাইছেন।