‘পাচারের সাথে চার দেশের সিন্ডিকেট জড়িত’

SHARE

cindicateমালয়েশিয়াতে অবৈধভাবে যাওয়া অভিবাসীদের উদ্ধারের ঘটনার পর সেখানে অভিবাসন নিয়ে যারা কাজ করেন তারা বলছেন মূলত বাংলাদেশসহ চারটি দেশের সিন্ডিকেট যৌথভাবে অবৈধভাবে মানব পাচারের কাজ করে থাকে।

সোমবার যাদের উদ্ধার করা হয় তাদের মায়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে নেয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছে মালয়েশিয়ার পুলিশ।
এসব দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সীমান্ত প্রহরী বাহিনীর একটি অংশের কাছ থেকে তারা সহযোগিতা পেয়েই ওই চক্রটি কাজ করে বলে মনে করছেন তারা।

মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা কারাম এশিয়ার কর্মকর্তা হারুন-উর-রশিদ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “মেরিটাইম জোন বা সীমান্তে তো আইন রক্ষাকারী বাহিনীর সমর্থন ছাড়া তো এমন পাচার সম্ভব নয়। পুরো বিষয়টির সঙ্গেই দুর্নীতি জড়িত। তা না হলে যারা জড়িত হিসেবে ধরা পড়ে তাদেরও তো বিচার হয়না”।

মালয়েশিয়ার পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সোমবার দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লাংকাওয়ী দ্বীপে তিনটি নৌকায় করে এক হাজারেরও বেশি অভিবাসী এসে নেমেছে।

লাংকাওয়ীর পুলিশ কর্মকর্তা জামিল আহমেদ জানিয়েছেন, মোট ১০১৮ জন অভিবাসীর মধ্যে ৫৫৫ জন বাংলাদেশী এবং ৪৬৩ জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম।অভিবাসীদের মধ্যে পঞ্চাশটিরও বেশি শিশু এবং প্রায় একশ’র মতো মহিলা রয়েছে।

মালয়েশিয়াতে অবৈধভাবে যেসব বাংলাদেশি যায়, তাদের সেখানে নেয়ার জন্য মালয়েশিয়ার চক্র কিভাবে কাজ করে এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন-উর-রশিদ বলেন, “ তাদের গবেষণা অনুযায়ী এখানে ( মালয়েশিয়া) একটি সিন্ডিকেট আছে বাংলাদেশের। আর এদের সাথে আছে বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে আছে একটি সিন্ডিকেট। বাংলাদেশ থেকে এরা লোকজন সংগ্রহ করে। বা এখান থেকে কেউ বলে আমার ভাই বা কেউ আছে আনতে হবে। এ দুই পর্যায়ের সাথে আবার আপার লেভেলে আরেকটি গ্রুপ আছে।”

তিনি জানান অবৈধভাবে নেয়া মানুষজন যদি কোনোভাবে কক্সবাজার থেকে মালয়েশিয়ার পেনাং, লাঙ্কাউয়ে বা থাইল্যান্ডের সীমান্তে পৌঁছতে পারে তাহলে কোনো একটা জায়গায় গিয়ে স্থানীয় দালাল বা ফ্যামিলিকে কল দিতে শুরু করে পাচারকারীরা। এরপর যদি টাকা পায় বাসা বাড়িতে আটকে টাকা আদায় করে। পরে তাদের প্রতিবেশী বা আত্মীয় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে।

মালয়েশিয়ার নাগরিক জড়িত কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন-উর-রশিদ বলেন এখানে চার দেশের নাগরিকরা জড়িত না হলে এমন তো সম্ভব না। মালয়েশিয়ান থাই ও মায়ানমারের লোকজন জড়িত আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও জড়িত দুর্নীতির কারণে। কক্সবাজার বা এখানে বর্ডার গার্ডের সাথে যোগসাজশ ছাড়া এটা কিভাবে হয়।

“অবৈধভাবে যারা শেষ পর্যন্ত যেতে পারে সেখানে তারা কি করে সেখানে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন কোনোভাবে তারা একটা কাজ করে। কিন্তু ঝুঁকি হলো তার আটক হতে পারে যে কোন সময়।”

মি. রশিদ বলেন অনেকে নৌকায় করে আসার পথে মারা যায়। আবার অনেককে মালয়েশিয়ায় আসার পর আটকে রেখে কাজ করানো হয়। যেমন ফিশিং বোটে কাজ করানো হয় কিন্তু টাকা দেয়া হয়না। ফিশিং বোটেও অনেকে মারাও গেছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী প্রায় সাত লাখ বাংলাদেশী মানুষ এখন অবৈধভাবে অবস্থান করছে মালয়েশিয়ায় । প্রতি মূহুর্তে তারা ভয়ে থাকে।

আর এসব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশীদের মধ্যে মানসিক চাপে প্রচুর মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে বলে জানান তিনি।– বিবিসি