ভুয়া বিয়ে করে নিউজিল্যান্ডে নাগরিকত্ব, বাংলাদেশির ‘রেকর্ড’ কারাদণ্ড

SHARE

প্রত্যাশার তুলনায় দুর্বল কর্মসংস্থান প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে শুল্কনীতি নিয়ে উদ্বেগ আরো বেড়ে গেছে। এর পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান প্রকাশকারী সংস্থার প্রধানকে বরখাস্ত করতে যাচ্ছেন তিনি। এর ফলে হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান ব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিএলএস) কমিশনার এরিকা ম্যাকএন্টারফার ইচ্ছাকৃতভাবে চাকরির তথ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিকৃত করেছেন।
যদিও তিনি তার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি।

ম্যাকএন্টারফার বলেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মান।’ ম্যাকএন্টারফার তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই সংস্থার কমিশনার হিসেবে কাজ করাকে তিনি ‘তার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মান’ বলে মনে করেন এবং সংস্থার নাগরিক কর্মীদের ‘এই দেশের সেবার জন্য’ ধন্যবাদ জানান। তিনি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকারি কাজে যুক্ত ছিলেন এবং ২০২৩ সালে বিএলএস প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান, যা সিনেটে প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়।

চাকরির তথ্য নিয়ে বিতর্ক

বিএলএসের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৭৩ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে। মে ও জুনের আগের হিসাবও সংশোধন করে দেখানো হয়েছে যে আগের তুলনায় প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজারের কম চাকরি তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প এই পরিসংখ্যানকেই ভিত্তি করে ম্যাকএন্টারফারকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের সঠিক চাকরির সংখ্যা দরকার।
আমি আমার টিমকে নির্দেশ দিয়েছি, যাতে এই বাইডেন-নিযুক্ত রাজনৈতিক কর্মকর্তা‌কে সঙ্গে সঙ্গে বরখাস্ত করা হয়।’

এ ঘটনার পর অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের প্রধান মার্কিন অর্থনীতিবিদ রায়ান সুইট বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। যদি তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে সেটি বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করবে।’ অর্থনীতিবিদ মাইকেল স্ট্রেইন বলেন, ম্যাকএন্টারফার ‘অসাধারণ সততার সঙ্গে কাজ করেছেন।’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘সরকারি পরিসংখ্যান নিরপেক্ষ এবং সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন হওয়া উচিত।
প্রেসিডেন্ট এই বিশ্বাসকে আঘাত করছেন।’

পিটারসন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো জেড কোলকো বলেন, ‘বিএলএস প্রধানকে বরখাস্ত করাটা আমেরিকার অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান ব্যবস্থায় একটি ‘পাঁচ স্তরের অ্যালার্ম সংকেত’। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ক্ষতির স্পষ্ট নিদর্শন।’

এদিকে শ্রম দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন কমিশনার নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিএলএদের ডেপুটি কমিশনার উইলিয়াম উইয়াত্রোভস্কি অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। এই সিদ্ধান্ত এমন একসময়ে এসেছে, যখন ট্রাম্প তার শুল্কনীতি কঠোর করার পথে এগোচ্ছেন। তিনি বিশ্বব্যাপী পণ্যে ১০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করছেন। এর ফলে বিশ্ববাজারে বড়সড় ধাক্কা লেগেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রধান সূচক শুক্রবার তীব্র পতনের মধ্য দিয়ে দিন শেষ করেছে। এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ১.৬ শতাংশ কমে বন্ধ হয়, ডাও জোন্স ১.২ শতাংশ এবং নাসডাক ২.২ শতাংশ কমে যায়। ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচক ২.৯ শতাংশ, জার্মানির ডিএক্স ২.৬ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ০.৭ শতাংশ হ্রাস পায়। এশিয়ার বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে—দক্ষিণ কোরিয়ার সূচক ৩.৮ শতাংশ, হংকংয়ের হ্যাংসেং ১ শতাংশ এবং জাপানের নিক্কেই ০.৬ শতাংশ পড়ে যায়।

চাকরির তথ্য প্রকাশের পর ট্রাম্প আবারও মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েলকে আক্রমণ করে বলেন, তিনি সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে ‘অতি ধীর’। এই প্রসঙ্গে ফেড কমিটির সদস্য অ্যাড্রিয়ানা কুগলার ঘোষণা দেন, জানুয়ারিতে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি পদত্যাগ করছেন। ফলে ট্রাম্প নতুন কাউকে নিয়োগের সুযোগ পাবেন।

সাংবাদিকদের সামনে হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি কি সত্যিই এই তথ্যগুলো বিশ্বাস করবেন? আমি মনে করি এই সংখ্যা ভুয়া, যেমনটা ছিল নির্বাচনের আগেও। তাই আমি তাকে বরখাস্ত করেছি। আমি সঠিক কাজটাই করেছি।’

বিশ্লেষকদের মতে, সরকারি পরিসংখ্যানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের এমন নজির মার্কিন অর্থনীতির বিশ্বাসযোগ্যতা এবং ভবিষ্যতের আর্থিক নীতিকে গভীর সংকটে ফেলতে পারে।

সূত্র : বিবিসি