ইরানের ৯০ শতাংশ তেল রপ্তানি বন্ধের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র

SHARE

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তেল রপ্তানির পরিমাণ কমিয়ে ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে। সর্বাধিক চাপ প্রয়োগ করে ইরানের তেল বাণিজ্যের এই পরিণতি করতে চায় বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন গণমাধ্যম ফক্স বিজনেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট।

তিনি বলেন, প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করে ইরান।
যুক্তরাষ্ট্র এটিকে ১ লাখে নামানোর জন্য কাজ শুরু করেছে। গত সপ্তাহে ইরানকে পরমাণু খাতে এগিয়ে যাওয়া থেকে রুখতে ‘সর্বাধিক অর্থনৈতিক চাপ’ প্রয়োগের নির্দেশ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে এই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প একটি স্মারকের মাধ্যমে ট্রেজারি বিভাগকে ইরানকে পরমাণু খাতে এগিয়ে যাওয়া রুখতে ‘সর্বাধিক অর্থনৈতিক চাপ’ প্রয়োগের নির্দেশ দেন।
ট্রাম্পে প্রথম মেয়াদে এমন নির্দেশের ফলে ইরানের তেল রপ্তানি ২০১৭ সালে প্রায় ৩০ লাখ ব্যারেল থেকে ২০১৯ সালে ৪ লাখ ব্যারেলে নেমে এসেছিল।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০১৫ সালের যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে আসে ওয়াশিংটন। তারপর শুরু হয় তাদের সর্বাধিক চাপ অভিযান। ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে একটি চুক্তি করা হয়।
ইরানের পারমাণবিক প্রযুক্তি উন্নয়ন ঠেকাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ট্রাম্প।

ট্রেজারি সেক্রেটারি বেসেন্ট বলেন, ‘তিনি বিশ্বাস করেন ওয়াশিংটন ইরানের ওপর সর্বাধিক অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে সক্ষম। যদি আমরা তাদের ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে পারি তাহলে তারা গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে বলে আমি মনে করি।’

ইরানের উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং বিশাল আকারের বাজেট ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বেসেন্ট বলেন, ‘তাদের অর্থনীতি এখন বেশ ভঙ্গুর’। তিনি আরো দাবি করেন, ইরানের তেল রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত আয় ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ অর্থায়নে ব্যবহার করা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে ট্রাম্পের ঘোষণার পরবর্তী দিনগুলোতে তিনটি ট্যাংকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ট্রেজারি বিভাগ। বেসেন্ট বলেন, ট্রাম্পের নির্দেশনা পেলে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ রাশিয়ান শক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরো বাড়াবে।

ট্রাম্পের আদেশে বলা হয়, স্টেট ডিপার্টমেন্ট বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার অব্যাহতি পরিবর্তন বা বাতিল করবে এবং ট্রেজারির সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বাধিক চাপ অভিযানে অংশ নেবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তেল রপ্তানি প্রায় শূন্যের পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারবে না, যদি না তারা মধ্যস্থতাকারী এবং চীনের ক্রেতাদের লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এ প্রসঙ্গে বেসেন্ট বলেন, ‘চীন, সম্ভবত ভারতও নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ইরানি তেল কিনছে এবং তা মেনে নেওয়া হবে না।

ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি করার আশা করছেন ট্রাম্প। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বান আরাগচি বলেছেন, ‘ট্রাম্পের সর্বাধিক চাপ নীতির অধীনে এ সংক্রান্ত আলোচনা করা সম্ভব নয়।’

এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলেন, ‘আলোচনা দুর্বল অবস্থান থেকে পরিচালিত হতে পারে না, কারণ এটি আর আলোচনা হিসেবে গণ্য হবে না, বরং এটি এক ধরনের আত্মসমর্পণ হবে। আমরা কখনো এভাবে আলোচনা টেবিলে বসি না।’

বৈশ্বিক অর্থনীতি বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইরানের অপরিশোধিত তেল উৎপাদন দিনপ্রতি ৩২ লাখ ৮০ হাজার মিলিয়ন ব্যারেল ছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ওপেকের স্বেচ্ছায় উৎপাদন কমানোর পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক চাপ অভিযানের দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত হবে না। এছাড়া, বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়া প্রায় পাঁচ লাখ ব্যারেল তেল সংরক্ষণের পর্যাপ্ত সক্ষমতা রয়েছে জোটের কাছে।