ওয়ানডে ক্রিকেট যে শুধুমাত্র ব্যাটসম্যানদের জন্য তা হয়ত আরেকবার প্রমাণিত হলো এবারের বিশ্বকাপে। গ্রুপ পর্ব শেষে বিশ্বকাপে ইতোমধ্যেই ৩৫টি সেঞ্চুরি হয়ে গেছে, যা বিশ্বকাপে এযাবত কালের রেকর্ড। ১৯৭৫ সালের বিশ্ব আসরে যেখানে হয়েছিল মাত্র ছয়টি। এখনো কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল মিলিয়ে বিশ্বকাপের সাতটি ম্যাচ বাকি রয়েছে।
এবারের আসরে সেঞ্চুরি হাঁকানোর তালিকায় শ্রীলংকান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা সর্বকালের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। টানা চারটি সেঞ্চুরি করে তিনি বিশ্বকাপে তো বটেই ওয়ানডে ক্রিকেটে ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই রেকর্ড গড়েছেন। ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা ৩৭ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজিত ১০৫ রান, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১১৭, অস্ট্রেলিয়ান বিপক্ষে ১০৪ এবং স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৪ রান করেন। বিস্ময়করভাবে টেস্ট আঙ্গিনার বাইরের দেশ আফগানিস্তানের বিপক্ষে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি সাঙ্গা। মাত্র সাত রানে তিনি সাঝঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। এছাড়া নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সংগ্রহ করেছিলেন ৩৯ রান। সাঙ্গার এই অনন্য কৃতিত্বে শ্রীলংকান ক্রিকেটের নির্বাচক কমিটির প্রধান ও সাবেক অধিনায়ক সনাৎ জয়াসুরিয়া বলেছেন, এটা সত্যিই বিরল এক কৃতিত্ব। এটা সচরাচর দেখা যায়না। টানা চতুর্থ সেঞ্চুরি দেখার বিরল এক অভিজ্ঞতা আমার হলো। আমার জন্য এটা দারুণ সৌভাগ্যের।
গ্রুপ পর্বের ৪২টি ম্যাচে করা ৩৫টি সেঞ্চুরির মধ্যে শ্রীলংকার সংগ্রহে আছে আটটি, দক্ষিণ আফ্রিকার পাঁচটি, ভারতের চারটি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার তিনটি করে, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের দুটি করে, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও স্কটল্যান্ডের রয়েছে একটি করে সেঞ্চুরি।
১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডের ডেনিস আমিস প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন। ওই আসরে সর্বমোট ছয়টি সেঞ্চুরি হয়েছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আসরে বোলারদের আধিপত্যই ছিল বেশি। সেই আসরে মাত্র দুটি শতক হয়েছিল। দুটোই করেছিলেন সেই আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা। গ্রুপ পর্বে ভারতের বিপক্ষে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান গর্ডন গ্রীনিজ এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে ফাইনালে তারকা ব্যাটসম্যান ভিভিয়ান রিচার্ডস ১৩৮ রানে অপরাজিত থেকে ক্যারিবীয়দের শিরোপা নিশ্চিত করেছিলেন।
১৯৮৩ সালে আবারো ইংল্যান্ডের অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি হয়েছিল আটটি এবং উপ-মহাদেশে ১৯৮৭ সালের পরবর্তী আসরে সেঞ্চুরির সংখ্যা ছিল ১১টি।
১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে আয়োজিত বিশ্ব আসরে সেই সংখ্যা আবারো আটে নেমে আসে। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়ায় ২১টি শতক হাঁকিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের ব্যাটসম্যানরা। ২০০৭ সালের ক্যারিবীয় বিশ্বকাপে সেই সংখ্যা কমে ২০টি হয়েছিল। ২০১১ সালে ভারত, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত উপ-মহাদেশীয় আসরে ২৪টি সেঞ্চুরি হয়েছিল।