রাশিয়ার তেল ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানির জন্য ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, পাকিস্তান এবং আমেরিকা পাকিস্তানের তেলের মজুদ উন্নয়নের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।
এ ছাড়া ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন, ‘হয়তো ইসলামাবাদ কোনো দিন নয়াদিল্লির কাছে তেল বিক্রি করবে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে এই অংশীদারিত্বের জন্য একটি আমেরিকান তেল কম্পানি নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে।
ট্রুথ সোশাল-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছি, যার মাধ্যমে দুই দেশ একসঙ্গে পাকিস্তানের বিপুল তেল মজুদ উন্নয়নে কাজ করবে। বর্তমানে আমেরিকান একটি তেল কম্পানি বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে। কে জানে, একদিন হয়তো পাকিস্তানই ভারতকে তেল রপ্তানি করবে!’
এই ঘোষণার আগে ট্রাম্প ভারতের ওপর ১ আগস্ট থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। সঙ্গে ছিল রাশিয়া থেকে ভারতের জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা পণ্যের আমদানি নিয়ে অতিরিক্ত ‘শাস্তিমূলক’ করের হুমকি, যদিও এর নির্দিষ্ট হার তখনো জানানো হয়নি।
বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল ব্যবহারকারী দেশ ভারত। যার প্রায় ৮৮ শতাংশ তেল আমদানি নির্ভরশীল। বর্তমানে ভারতের আমদানিকৃত অপরিশোধিত তেলের প্রায় ৪০ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। এরপর রয়েছে ইরাক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে পাকিস্তানও জ্বালানি আমদানিতে নির্ভরশীল, কারণ দেশটির অভ্যন্তরীণ তেল উৎপাদন অতি সীমিত।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে, তবে সেপ্টেম্বরের আগেই তা সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করা হচ্ছে। অক্টোবর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ষষ্ঠ রাউন্ডের আলোচনা আগস্টে হওয়ার কথা রয়েছে। নীতিনির্ধারণী মহলে মনে করা হচ্ছে, ২৫ শতাংশ শুল্ক কিছুটা প্রত্যাশিতই ছিল।
তবে রাশিয়া থেকে আমদানি সংক্রান্ত শাস্তিমূলক কর ভারতের জন্য বড় আর্থিক ধাক্কা হতে পারে।
ট্রাম্পের ঘোষণায় আরো বলা হয়, ‘যখন বিশ্ব চায় ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা বন্ধ হোক, তখন ভারত ও চীন রাশিয়ার সবচেয়ে বড় জ্বালানি ক্রেতা — এটা কোনো ভালো বিষয় নয়!’ তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধু হলেও, তারা সব সময় রাশিয়ার কাছ থেকে অধিকাংশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনে এসেছে। তাদের শুল্কও বিশ্বের মধ্যে অন্যতম উচ্চ এবং তারা নানা ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।’
ট্রাম্প দাবি করেন, পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি ছাড়াও তিনি বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে শুল্ক কমানোর বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপীয় দেশসহ অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে উদ্যোগ নিচ্ছে বলেও জানান তিনি। সম্প্রতি পহেলগাঁও হামলার ঘটনায় ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা বেড়ে যায়। ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছেন, যদিও ভারত একাধিকবার স্পষ্ট করেছে — কোনো তৃতীয় পক্ষ এতে জড়িত নয়।
সূত্র : দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।