জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারী শিক্ষার্থীদের একত্রিত করার চেষ্টা করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফসিন মেহেনাজ আজিরিন। নাফসিন মনে করেন, নারীরা যখন রাস্তায় নেমে আসেন তখন ইতিহাস পাল্টে যায়। নারী শক্তি রাজনীতিতে যুক্ত হলে দেশের রাজনীতি পাল্টে যাবে।
নাফসিন এমন এক বাংলাদেশ চান, যেখানে কেউ প্রশ্ন করলে গুম হবে না, প্রতিবাদ করলে গুলি খাবে না।
যেখানে ভিন্নমত প্রকাশ করলে অপরাধ হবে না। তিনি একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এমন স্বপ্নের কথা জানান জুলাইয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া মেহেনাজ।
সাক্ষাৎকারে নাফসিন মেহেনাজ আজিরিন বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আমাদের প্রজন্মের আত্মচেতনার জাগরণ।
এটা শুধু একটি সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না, এটি ছিল একদল তরুণ-তরুণীর বিবেকের ডাকে সাড়া দেওয়ার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমি এই অভ্যুত্থানকে দেখি একটি নবজাগরণ হিসেবে, যেখানে সত্য, সাহস ও স্বপ্ন একসাথে মিশে একটি নতুন বাংলাদেশের ভিত্তিপ্রস্তর গড়ে তোলে।’
তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান ছিল এক নতুন আশার আলো, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার পথে একটি সাহসী পদক্ষেপ। নিম্নশ্রেণি থেকে উচ্চশ্রেণির মানুষ যেন সমানভাবে বাঁচতে পারে, সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নের লড়াই।
আমরা এমন একজন সৎ ও নীতিবান শাসক দেখার অঙ্গীকার নিয়েই পথে নেমেছিলাম। হয়তো এখনো সে স্বপ্ন পুরোপুরি বাস্তব হয়নি, কিন্তু আমাদের লড়াই ছিল সেই স্বপ্নেই বিশ্বাস রেখে, সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের জন্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার আন্দোলনের শুরুটা হয়েছিল ১৫ জুলাই থেকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টরা আসলে অনেকে কোটার বিষয়টা ঠিকমতো করে জানেও না। তবু তারা আন্দোলনে নেমেছিল শুধু বিবেকের তাড়নায়।
যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইদের অত্যাচার করা হচ্ছিল এবং তাদের সাথে অন্যায় হয়েছিল; তাদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ এবং গুলি করেছিল তখনই আমরা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টরা মনে করেছিলাম আমাদের এখনই আন্দোলনে নামা উচিত। তাই কোনো কিছু না ভেবে আন্দোলনে নেমে পড়ি। পুরো সময়টা এতই ভয়ংকর ছিল যে বলার মতো না। মাঠে না নেমে উপায় ছিল না।’
জুলাইয়ে নারীদের অংশগ্রহণের ফলে আন্দোলনটা আরো অনেক বেশি তীব্র এবং বেগবান হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কারণ আমি মনে করি, নারীরা যখন রাস্তায় নেমে আসে তখন ইতিহাস পাল্টে যায়। এই জুলাই অভ্যুত্থানে নারীরা ন্যায়বিচারের দাবিতে রাস্তা নেমেছিল আর স্লোগান দিয়েছিল তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার! কে বলেছে, কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার! নারীদের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের উপস্থিতি ছিল স্বৈরাচারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ঘোষণা। এ সরকার চেয়েছিল আমাদের দমিয়ে রাখতে, আমাদের চুপ করাতে কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছিল যেখানে নারীরা দাঁড়ায় সেখানে ইতিহাস পাল্টে যায়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীরা শুধু নিজেদের অধিকারের জন্য নয় বরং সমগ্র জাতির পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। জাতির মুক্তির লড়াইয়ে নারীরা যুগে যুগে অংশগ্রহণ করে প্রমাণ দিয়েছে যে ন্যায্যতার প্রশ্নে তারা পিছপা হন না। লড়াই চালাতে জানে তারা। নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসবে। জুলাই সেই সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সেদিকে নজর রাখা।’
নতুন বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি এমন এক বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে কেউ প্রশ্ন করলে গুম হয় না, প্রতিবাদ করলে গুলি খায় না। যেখানে ভিন্নমতের অপরাধ নেই, বরং তা গণতন্ত্রের শক্তি হিসেবে মূল্যায়িত হয়। আমি এমন একটি দেশ চাই, যেখানে রাষ্ট্রের মালিকানা রাজনীতিবিদদের নয়, বরং জনগণের কাছে থাকে। যেখানে একজন নারী নির্ভয়ে রাস্তায় হাঁটতে পারে, একজন শ্রমিক ন্যায্য মজুরি পায়, আর একজন শিক্ষার্থী নিঃসংকোচে সত্য বলতে পারে।’
তিনি বলেন, “এমন একটা বাংলাদেশ চাই, যেখানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলাকে সাহস না, বরং নাগরিক দায়িত্ব বলে গণ্য করা হয়। আমি এমন এক বাংলাদেশ চাই, যেখানে আমরা সবাই বুক উঁচিয়ে গর্ব করে বলতে পারি, ‘এটাই আমার দেশ, বাংলাদেশ’।”