সুব্রামনিয়াম স্বামীকে আসামে ঢুকতে হুঁশিয়ারি তরুণ গগৈর

SHARE

kuspottolikaমসজিদ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় বিজেপি নেতা সুব্রামনিয়াম স্বামীকে আসাম রাজ্যে প্রবেশে বাধা দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। স্বামীর বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে নানা মহল থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার পর এ হুঁশিয়ারি দিলেন গগৈ।

সম্প্রতি আসামে এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে বিজেপির নেতা সুব্রামনিয়াম স্বামী বলেন, “অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ হবেই।” তিনি মন্তব্য করেন, “বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে কেউ অন্যায় করেনি। মন্দির ভাঙা অন্যায়, কেননা মন্দিরে ঈশ্বর থাকেন। কিন্তু মসজিদ কোনো ধর্মীয় স্থানই নয়, উপাসনাস্থল মাত্র। নামাজ পড়ার বিল্ডিং। গির্জাও তেমনই।”

শনিবার আসামের কাজিরাঙ্গা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠান শেষে সুব্রামনিয়াম সাংবাদিকদের বলেন, “মসজিদ ভাঙতে কোনো বাধা নেই। সৌদি আরবে সড়ক নির্মাণের জন্য মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে এ রকম নজির রয়েছে। যদি কেউ আমার সঙ্গে একমত না হন, তাহলে তার সঙ্গে বিতর্কে যেতে রাজি।”

সুব্রামনিয়াম স্বামীর এমন বিতর্কিত মন্তব্যে বিপাকে পড়েছে বিজেপি। দলের মধ্যে তার বক্তব্য নিয়ে বিব্রত নেতারা। এ নিয়ে বিজেপিতে তীব্র মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসে পড়েছে।

বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র নলিন কোহলি বলেছেন, “কোনো ব্যক্তির ধর্মীয় বিশ্বাস ও উপাসনাস্থল নিয়ে সবার শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত।”

এদিকে, অসমের বিজেপি প্রেসিডেন্টকে কার্যত ‘অশিক্ষিত’ ও ‘রাজনীতির জ্ঞানশূন্য’ বলে মন্তব্য করায় বেজায় চটেছেন সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য।

সুব্রামনিয়াম স্বামী মন্তব্য করেন, “দেশবাসীর একাংশ এখনো অশিক্ষিত। এদের অনেকেই সাক্ষর হলেও এরা জ্ঞানশূন্য। বিজেপির রাজ্য প্রেসিডেন্ট সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্যও অশিক্ষিত-রাজনৈতিক জ্ঞানশূন্য।” সিদ্ধার্থ দিল্লি গেলে তাকে  পাঠদান করতে পারেন বলেও জানান স্বামী।

সুব্রামনিয়াম স্বামীর পাল্টা আঘাত হেনে সুব্রত ভট্টাচার্যের মন্তব্য্- ‘সুব্রামনিয়াম স্বামী একজন ধর্মান্ধ।’ তিনি বলেন, স্বামীর এ ধরনের মন্তব্যে  দলের ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে তুলে ধরবেন বলেও জানান।

সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য বলেন, “আগামী ১৮ থেকে ২০ মার্চ দিল্লিতে দলের সর্বভারতীয় প্রেসিডেন্ট অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক হবে। সেখানে স্বামীর মন্তব্যের যাবতীয় নথিপত্র তুলে দেব। তিনি অসমে এসে বারবার যেভাবে বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলছেন, তাতে দলের ক্ষতি হচ্ছে।”

তাকে সুব্রামনিয়াম স্বামী ‘অশিক্ষিত’ বলে কটাক্ষ করার জবাবে সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য বলেন, “স্বামীর কাছ থেকে হিংসা, বিদ্বেষ, ধর্মান্ধতার শিক্ষা গ্রহণ করতে চাই না আমি। এ জন্য কেউ যদি আমাকে অশিক্ষিত বলে, তাহলে আমি অশিক্ষিত হয়ে থাকতেই খুশি হব।”

সুব্রামনিয়াম স্বামীর মন্তব্য সম্পর্কে রাজ্য বিজেপির প্রেসিডেন্ট সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য বলেন, “সুব্রমনিয়াম স্বামীর এই মন্তব্য একান্তই ব্যক্তিগত। বিজেপির নীতির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।”

এদিকে, বিজেপির নেতা সুব্রামনিয়াম স্বামীর এ ধরনের বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা নিজামুদ্দিন। তিনি বলেছেন, “আমাদের দেশে ৮০০ বছর ধরে ইসলামি হুকুমত ছিল, কিন্তু কোনো বাদশাই মসজিদ ভাঙেননি।”

স্বামীর দেয়া সৌদি আরবের উদাহরণ প্রসঙ্গে মাওলানা নিজামুদ্দিন বলেন, “সৌদি আরব তাদের নিয়মে চলে। স্বামী যদি তাদের সঙ্গে একমত হতে চান তাহলে সৌদি আরবের নিয়ম এখানে চালু করুন। সেখানে চুরি বা অন্যান্য  অপরাধে হাত কাটা এমনকি মুণ্ডচ্ছেদ করা হয়। আসলে সরকারের ব্যর্থতা চাপা দিতে স্বামী এ ধরনের মন্তব্য করেছেন।”

অল ইন্ডিয়া শিয়া পার্সোনাল ল’ বোর্ডের মুখপাত্র মাওলানা ইয়াসুব আব্বাস বলেন, “মসজিদ কোনো সাধারণ ইমারত নয়, বরং তা আল্লাহর ঘর। কোনো অবস্থাতেই তা ভেঙে ফেলা যায় না।” তিনি আরো বলেন, “সৌদি আরব দুনিয়ার জন্য উদাহরণ নয়।”

বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী রিসার্চ ইনস্টিটিউট শিবলি একাডেমির উপপ্রধান মাওলানা উমর আল সিদ্দিক বলেন, “যেখানে মসজিদ নির্মাণ করা হয়, সেখানে কেয়ামত পর্যন্ত মসজিদই থাকে।” -আইআরআইবি।