প্রশাসনের দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ ‘বাঁশেরকেল্লা’র প্রধান এডমিন খন্দকার মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন ফাহাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই পেজ কর্তৃপক্ষ ফাহাদের প্রধান এডমিন হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। পেজটিতে দাবি করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফাহাদকে প্রধান এডমিন বলে দাবি করলেও, তিনি প্রধান এডমিন নন। এদিকে, ফাহাদকে গ্রেফতার করার পর গোয়েন্দাসংস্থাগুলোর নানামুখী তৎপরতা ও বিটিআরসির কঠোর নজরদারি থাকা সত্ত্বেও ‘বাঁশেরকেল্লা’ পেজটি এখনও চালু রয়েছে।
শুক্রবার ‘বাঁশেরকেল্লা’ পেজে দাবি করা হয়, ‘আসসালামু আলাইকুম। বিভিন্ন টেলিভিশনে ও অনলাইন নিউজে ব্রেকিং নিউজ দেওয়া হচ্ছে- ‘বাঁশেরকেল্লা পেইজের প্রধান এডমিন আটক।’ কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনাদের প্রিয় পেইজ ‘বাঁশেরকেল্লা’র প্রধান এডমিনসহ সব এডমিন নিরাপদ আছেন, আলহামদুলিল্লাহ।’ পেজটিতে আরও বলা হয়, ‘এর আগেও কয়েকবার এরকম নাটক করে এডমিন গ্রেপ্তারের গুজব ছড়িয়েছিল সরকার। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করার সঙ্গে-সঙ্গে তারা স্যোশাল মিডিওয়ার ওপরও কালো থাবা ফেলার অপচেষ্টা করে আসছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু জনতার কথা কি আর আটকে রাখা যায়!’ একই সঙ্গে আরও বলা হয়, ‘সবার কাছে দোয়া চাই, যেন অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও সব সময় আমরা সত্যের পথে অবিচল থেকে সাহসিকতার সঙ্গে সত্য উন্মোচনের কাজ চালিয়ে যেতে পারি। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন। আমিন।’
জানা গেছে, গণজাগরণ মঞ্চের দাবির মুখে ২০১৩ সালে ফেব্রুয়ার মাসে ‘বাঁশেরকেল্লা’ বিটিআরসি বন্ধ করে দেয়। এরপর মাত্র একদিনের মাথায় বিশেষ কায়দায় ‘বাঁশেরকেল্লা’ চালু হয়। অদ্যাবধি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও অব্যাহত রয়েছে ছাত্র শিবিরের বিকল্প মিডিয়া হিসেবে খ্যাত ফ্যানপেজটি। ইতোমধ্যে পেজটির লাইকার সংখ্যা নয় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া এই নামে ফেসবুকে অন্তত ৩০টি পেজের সন্ধান মিলেছে।
জানা গেছে, এর আগেও বিগত দুবছরে একাধিকবার আওয়ামী লীগ ও সরকারদলীয় অনেক নেতাকর্মীকে এই পেজ থেকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার ওসি মহসীনকে হুমকি দেওয়ার পরে তিনি জিডি করেন থানায়। ‘বাঁশেরকেল্লা’ পেজটিকে ছাত্রশিবির জামায়াতে ইসলামীর বক্তৃতা, বিবৃতি, সরকারবিরোধী স্ট্যাটাস, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ও দণ্ডপ্রাপ্ত নেতাদের প্রশংসা করে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এছাড়া সরকারবিরোধী কয়েকজন টকশোর আলোচক, কলামিস্টসহ বিএনপি-জামায়াতপন্থী লেখকদের লেখাও শেয়ার দেওয়া হয়। এছাড়া ফাঁকে-ফাঁকে ছাত্র শিবিরের সভাপতি আবদুল জব্বার ও সেক্রেটারি জেনারেল আতিকুর রহমানের বক্তব্য-বিবৃতি প্রচার করে। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সরকারবিরোধী বক্তব্য, ফুটেজ, অাইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ওপর স্ট্যাটাস দিয়ে।
সূত্র মতে, ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানেই ‘বাঁশেরকেল্লা’ পেজটি সচল রয়েছে। পেজটি সচল রাখতে জামায়াত-শিবিরের কর্মসূচি, মিছিল, সমাবেশ, রাস্তায় আগুনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে পেজটিতে অাপলোড করা হয়। এ জন্য অন্তত ২৫ জনের একটি টিম রয়েছে। এসব টিমের প্রত্যেকে এডমিনের দায়িত্ব পালন করেন। সারা দেশে অন্তত আরও ৫০ টি জায়গায় লোকবল রয়েছে এর পেজ রক্ষণাবেক্ষণের কাজে। এছাড়া রয়েছে পেজটির নিজস্ব ফটোগ্রাফার টিম। ‘বাঁশেরকেল্লা’র দায়িত্ব যারা পালন করেন, তাদের জন্য ছাত্র শিবিরের জন্য আলাদা অর্থবরাদ্দও রয়েছে বলে সংগঠন সূত্রে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে ছাত্র শিবিরের প্রচার সম্পাদক মনির আহমদ ও সহকারী প্রচার সম্পাদক জামাল উদ্দিনের মোবাইলে একাধিকবার কল করেও বন্ধ পাওয়া গেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ আবাসিক এলাকার তার বোনের বাসা থেকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রচার বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক এবং বাঁশেরকেল্লাসহ অর্ধশতাধিক ফেসবুক পেজের এডমিন কে এম জিয়া উদ্দিন ফাহাদকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, দুটি নোকিয়া মোবাইল উদ্ধার করা হয়। ফাহাদ এসব আইডি দিয়ে বিচার বিভাগ, পুলিশ, লেখক এবং সাহিত্যিকদের ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশসহ হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। তাকে জামায়াত–শিবিরের আইটি বিষয়ক সমন্বয়কও করা হয়। এরপর থেকে ফাহাদ বাঁশেরকেল্লা (মেইন বাঁশেরকেল্লা), তিতুমীরের বাঁশেরকেল্লা, আওয়ামী ট্র্যাইবুনাল, বাকশাল নিপাত যাক, আই অ্যাম বাংলাদেশি, ডিজিটাল রূপে বাকশাল, বিএএন বাঁশখালী নিউজ–২৪, ইসলামী অনলাইন এক্টিভিস্ট, তরুন প্রজন্ম, বাঁশেরকেল্লা ইউএসএ, ভিশন ২০২১সহ অর্ধশতাধিক ফেসবুক পেজের এডমিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। এছাড়া ‘ট্রুথ ফাইটার ফেসবুক আইডি‘র মাধ্যমে আরও অর্ধশতাধিক পেইজ পরিচালনা করে আসছিল ফাহাদ। গ্রেফতারের পর গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে ফাহাদ এসব তথ্য জানিয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল।