দুই দফা সময় বাড়িয়েও হজের নিবন্ধন ৩০ শতাংশ

SHARE

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩০ জুলাই থেকে শুরু হবে পবিত্র হজ। আর ২৩ জুন বাংলাদেশে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে সৌদি আরবে হজ পালন হওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে অনিশ্চয়তা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের হজ যাত্রী নিবন্ধনেও।

নিবন্ধন বাড়াতে বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধনে দুইদফা সময় বাড়িয়েছে হজ বাতিল হলে টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছে কিন্তু উদ্বেগ কমেনি। সেই নিবন্ধনে সাড়া মিলছে না। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত ২৫ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে হজ নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৪১ হাজার ৮৫৪ জন, যা মোট লক্ষমাত্রার ৩০ শতাংশ। বর্ধিত সীমা অনুযায়ী ৮ এপ্রিলের মধ্যেই সবার নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। এই অবস্থায় লক্ষমাত্রার তুলনায় কত শতাংশ যাত্রী হজ করতে যাবেন কিংবা আদৌ হজে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন দেশের লাখো মুসলিম।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম হজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শাহ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনাভাইরাসের আতঙ্কের কারণে যাত্রীদের মধ্যে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। আমরাও সৌদি আরব সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি। হজের জন্য সময় এখনো অনেক বাকি কিন্তু হঠাৎ করে দেখা গেলো সৌদি সরকার হজের অনুমতি দিয়েছে তখন তো আমরা বিপাকে পড়বো। এজন্যই আমরা নিবন্ধনের প্রক্রিয়াগুলো এগিয়ে রাখছি।

তিনি বলেন, রমজানের সময়ে আমরা যাত্রীদের জন্য বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকি। তাই যারাহজে যাবেন মনস্থির করেছেন তারা এখনই নিবন্ধন করুন। আর যারা নিবন্ধন করে যেতে পারবেন না, তাদের কোন জরিমানা বা ফি কেটে রাখা হবে না। একই পরিমান টাকা তারা ফেরত পাবেন। আর চাইলে পরবর্তী বছরও তারা যেতে পারবেন। মন্ত্রী মহোদয়ও বিষয়টি স্পষ্ট বলে দিয়েছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে এবার সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন যাত্রী হজ করতে যাবেন। এরমধ্যে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন মাত্র ৪১ হাজার ৮৫৪ জন। লক্ষমাত্রার তুলনায় যা ৩০ শতাংশের মতো। স্বাভাবিক সময়ে সব নিবন্ধন কার্যক্রম এই সময়েই সম্পন্ন হয়ে যায়। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সৌদি আরব সরকার ইতোমধ্যে সেই দেশে ২১ দিনের কারফিউ জারি করেছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি আরব। দেশটিতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সিনেমা, শপিং মল, রেস্তোরাঁ বন্ধ করা করেছে। দুই সপ্তাহের জন্য আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। ওমরাহ ও ট্যুরিস্ট ভিসা স্থগিত করেছে সৌদি আরব। ২১ দিন অনুযায়ী আগামী ১৪ এপ্রিল সৌদি আরবের সেই কারফিউর মেয়াদ শেষ হবে। এরইমধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হলে হজ করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। গত ২৩ মার্চ বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠানো সৌদি সরকারের চিঠিতে হজ নিয়ে সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষায় থাকতে বলেছে।

এই অবস্থায় নিবন্ধন কার্যক্রমে সাড়া মিলছে না। হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর চুড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য প্রথম দফায় ১৫ মার্চ সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। সাড়া না পাওয়ায় সময় বাড়িয়ে ২৫ মার্চ করা হয়। এরপর তৃতীয় দফা বাড়িয়ে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেও খুব একটা সাড়া মিলবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ নিবন্ধনের জন্য টাকা জমা দিতে হবে ব্যাংকে গিয়ে কিন্তু ব্যাংক জরুরি কাজের জন্য খোলা থাকছে কেবল সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যে শহরে লোকজন বাসা-বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না।

এদিকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি সাধারণ ছুটি এরপর শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি শেষে অফিস খুলবে আগামী ৫ এপ্রিল থেকে। ৫ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় পাবেন যাত্রীরা। এরপর ৮ এপ্রিল শবেবরাতের সরকারি ছুটি। ফলে উক্ত তিনদিনে কেমন নিবন্ধন হবে তা বলা মুশকিল। এরপর আরেক দফা সময় বাড়ালেও খুব বেশি সাড়া মিলবে বলে মনে হচ্ছে না।

জানতে চাইলে হজ প্রাক নিবন্ধনকারী চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসিন্দা শফিউল আজম ও জান্নাতুল মোস্তফা কালের কণ্ঠকে বলেন, এখানে নিবন্ধন সময় বাড়ালে কী হবে। সৌদি আরবে আদৌ হজ হবে কিনা কিংবা হলেও সীমিত পরিসরে হবে কিনা তা জানার অপেক্ষায় আছি আমরা। সেটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমার মতো অনেকেই হয়তো আগ্রহী হবেন না চুড়ান্ত নিবন্ধন করতে। আমি স্ত্রীসহ এবার হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।