করোনায় মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন নেমেছে অর্ধেকে

SHARE

করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দৈনিক লেনদেন এখন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে অর্থ প্রেরণ, মার্চেন্ট পেমেন্ট এবং রেমিট্যান্সের অর্থ প্রেরণ সবই কমে গেছে। মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যেও দৈনন্দিন ও জরুরি লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে (এমএফএস) আস্থা রাখছেন মানুষ। কোথাও না গিয়ে ঘরে বসেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল প্রদান, মোবাইল রিচার্জ, সেন্ডমানি, অ্যাডমানি এবং পেমেন্টের মতো সেবাগুলো পাচ্ছেন গ্রাহকরা।

করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময়ে ব্যাংকিং লেনদেনও ৬ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ২ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

সাধারণ ছুটির কারণে দোকানপাট বন্ধ থাকার পাশাপাশি অনেক জায়গায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট আউটলেটও বন্ধ রয়েছে। আবার যেগুলো খোলা রয়েছে, সেখানে লেনলেন হচ্ছে কম। কারণ জরুরি লেনদেন ব্যতিত মানুষজন বের হচ্ছে না।

মাদারটেকের বিকাশ ও ডাচ বাংল ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট এনামুল হক সুজন কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউট মিলে ৫০ হাজার টাকার লেনদেন হতো। এখন সেই লেনদেন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা নেমে এসেছে। শুধু মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনই নয়, মোবাইল রিচার্জও কমেছে উলে­খযোগ্যহারে। আগে দৈনিক ৮ হাজার টাকার রিচার্জ হলেও এখন হয় মাত্র ২ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা। এটাও হতো না, যদি আমার আশপাশের দোকান খোলা থাকতো। করোনার কারণে অনেক দোকানই এখন বন্ধ রাখা হচ্ছে।

দক্ষিণ গোরানোর মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট সাইফুল হক বলেন, করোনার কারণে খুব প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাসা থেকে বের হচ্ছে না। এর প্রভাব পড়েছে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনেও। আমার দোকানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে লেনদেন কমেছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ।

জানা গেছে, বর্তমানে ১৫টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ এ সেবায় সবার শীর্ষে রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিমও করোনার কারণে লেনদেন কমার কথা স্বীকার করেন।

তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনার কারণে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন কিছুটা কম হবে। দেখেন স্বাভাবিক সময়ে যখন লেনদেন হয় তখন অফিস-আদালত মার্কেট প্লেস সবকিছুই খোলা থাকে। মানুষ ঘরের বাইরে বের হন। ফলে সেই সময় লেনদেন এমনিতেই বেশি থাকে। কিন্তু এখন সমস্ত কিছু বন্ধ থাকার পরও লোকজন ঘরে বসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করছেন। গত কয়েকদিন লেনদেনের যে ট্রেন্ড সেটা কিন্তু একেবারের কম না, ভালো। অর্থাৎ মানুষ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে এমএফএসকে ব্যবহার করছেন, এমএমএসের উপরই বেশি ভরসা রাখছেন।

তিনি উল্লেখ করেন, এখন সেন্ড মানি বেশি হচ্ছে। অর্থাৎ মানুষ পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা করছেন অনেকেই।

বিকাশ সূত্রে জানা যায়, ২৬ মার্চ বিশেষ পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ এই তিন দিনে গ্রাহক বিকাশেই প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ লেনদেন করেছেন। অর্থ্যাৎ বন্ধের সময় গড়ে প্রতিদিন ৫৫ লাখের বেশি লেনদেন হচ্ছে বিকাশ অ্যাপে। এর মধ্যে গত ২৪ মার্চ একদিনেই সারাদেশের সবগুলো বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানির প্রায় দেড় লাখ বিদ্যুৎ বিল বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করেছেন গ্রাহক।

সেই সঙ্গে এই বিশেষ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা প্রতিপালনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও ঔষধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অংকের পি-টু-পি লেনদেনে চার্জ নিচ্ছে না বিকাশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মোট লেনদেন হয়েছে ৪১ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। আজকের মাস জানুয়ারিতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তবে ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক লেনদেন প্রায় ৫ শতাংশ বেড়েছিল।