চীন থেকে উৎপত্তি হওয়া মারণ ভাইরাস করোনা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত ৩১ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ভারতজুড়ে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবার মাঠে সেনাবাহিনী নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।
ভারতীয় সেনা সূত্রের খবর, সেনা তত্বাবধানে প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন মানুষকে রাখার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার দ্রুত তৈরি করা হবে। জয়সালমের, সুরটগড়, সেকন্দ্রাবাদ, চেন্নাই এবং কলকাতায় এই কেন্দ্রগুলি খোলা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে, সামরিক বাহিনীতে সংক্রমণ ঠেকাতে একাধিক নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। ক্যান্টনমেন্ট এবং মিলিটারি স্টেশনের মধ্যে যে সব শপিং কমপ্লেক্স রয়েছে সেখান থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্যে সেনা সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অযথা ভিড়ে ঠাসা শপিং মল, সিনেমা হল এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে তাঁদের।
এক সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করনো ভাইরাস সংক্রান্ত সরকারি যে নির্দেশিকা তার উপর ভিত্তি করে সেনা সদরদপ্তর থেকেও একগুচ্ছ বিধিনিষেধের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় প্রত্যেক সেনা হাসপাতালকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালগুলি এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ ল্যাবোরেটরির সঙ্গে সংযোগ বজায় রেখে চলতে বলা হয়েছে।
হঠাৎ করেই ভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিজরুরি না হলে ভারতীয়দের বিদেশ ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় ভারতীয়দের বিদেশ ভ্রমণে একপ্রকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির সরকার। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ভারতীয় সংসদে বলেন, জরুরি কাজ না থাকলে বা খুব প্রয়োজন না থাকলে আপাতত বিদেশে যাবেন না। করোনা পরিস্থিতির ওপর আমরা সবসময় নজর রাখছি।
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুসারে ভারতে আগে থেকেই করোনা প্রতিরোধের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আগে বিমানবন্দরে ১২টি দেশের যাত্রীদের স্ক্রিনিং করলেও এখন সব দেশের যাত্রীদেরই স্ক্রিনিং করা হচ্ছে।
শিশুদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে দিল্লির সব প্রাথমিক বিদ্যালয় আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। দেশের বাকি স্কুলগুলোতেও শিক্ষার্থীদের ভিড়ে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি, স্কুলের বিভিন্ন জায়গায় সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারও শরীরে করোনা আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ দেখা দিলে তাকে হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইনে বা বাড়িতে ১৪ দিন নজরদারিতে রাখতে বলা হয়েছে।
এর আগে, বুধবার সংবাদ সম্মেলনে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছয় থেকে বেড়ে ২৮ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই ইতালীয় নাগরিক, বাকিরা ভারতীয়।
তিনি জানান, গত মাসে ইতালি থেকে একদল পর্যটক ভারত সফরে যান। মঙ্গলবার তাদের মধ্যে একজনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। তার স্ত্রীর রিপোর্টও পজেটিভ এসেছিল। পরে সেগুলো আবার যাচাইয়ের জন্য পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে নমুনা পাঠানো হয়। বুধবার নিশ্চিত হয়, তিনিও করোনায় আক্রান্ত।
ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় ইতালির ওই পর্যটক দলের ২১ জনকে দিল্লির চাওলায় ইন্দো-তিব্বতিয়ান বর্ডার পুলিশের কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্পে রাখা হয়। তাদের মধ্যে ১৪ জনের নমুনার রিপোর্টে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। পাশাপাশি, তাদের সঙ্গ দেয়া ভারতীয় বাসচালকেরও শরীরেও করোনা ধরা পড়েছে। আরও দুই ভারতীয় (বাসের হেল্পার ও গাইড) কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
এর আগে দিল্লির যে ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, আগ্রায় তার ছয় আত্মীয়ের রিপোর্টও পজেটিভ এসেছে। বুধবারই গুরুগাঁওয়ে পেটিএম-এর এক কর্মী করোনা আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হয়।
সূত্র-সংবাদ প্রতিদিন