উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন আগামী সপ্তাহে চীনের বেইজিংয়ে একটি সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন। এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিমের প্রথম সরাসরি নেতৃবৃন্দের সম্মেলন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই খবর জানিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই কুচকাওয়াজটি চীনের জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ৮০তম বার্ষিকী এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির স্মরণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এই অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ বিশ্বের ২৬টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। চীন এই অনুষ্ঠানে তাদের সামরিক বাহিনীর নতুন গঠন ও শক্তি প্রদর্শন করবে—শত শত যুদ্ধবিমান, ট্যাংক ও ড্রোনবিরোধী সিস্টেম প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গভাবে প্রদর্শিত হবে। তিয়ানআনমেন স্কয়ারে হাজার হাজার সেনা সদস্য অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে মার্চ করবেন। চীনের ৪৫টি সামরিক ইকেলনের সদস্য এবং যুদ্ধের প্রবীণরাও অংশ নেবেন।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং কুচকাওয়াজটি পরিদর্শন করবেন। অনুষ্ঠানটি ৭০ মিনিটব্যাপী চলবে এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও পশ্চিমা শক্তিগুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের ‘ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব’ রয়েছে এবং উভয় দেশ আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিয়ে যৌথভাবে কাজ করবে। এবার কিম নিজে অংশ নেওয়ায় এটি এক কূটনৈতিক উত্তরণ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক জয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেমন কিম ও পুতিনের সঙ্গে চুক্তি করতে চাইছেন, শি তেমনি দেখাচ্ছেন যে ভূ-রাজনৈতিক দৌড়ে তার অবস্থান এখনো গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষকদের মতে, শি যদি কিম ও পুতিনের কাছ থেকে সরাসরি তথ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি সংগ্রহ করতে পারেন। তবে তিনি যেকোনো মার্কিন-চীন সম্মেলনে আরো প্রস্তুত অবস্থায় থাকবেন। হোয়াইট হাউস ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অক্টোবরের শেষদিকে ওই অঞ্চলে সফরে যেতে পারেন এবং শির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগ্রহী।
২০১৯ সালের পর এই প্রথমবার কিম বেইজিং সফর করছেন। ২০১৮ সালে তিনি তিনবার বেইজিং সফর করেছিলেন, যা তার জন্য এক ব্যতিক্রমী আন্তর্জাতিক কার্যক্রম ছিল। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং এই কুচকাওয়াজে যোগ দেবেন কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সম্মতি জানাননি। সরকার পরিবর্তে নিম্নপর্যায়ের একজন রাজনীতিককে পাঠানোর কথা। লি যদি এই কুচকাওয়াজে অংশ নেন, তবে এটি কিমের কাছাকাছি আসার সুযোগ হলেও, ঝুঁকিপূর্ণ।
কিম যদি প্রকাশ্যে তাকে উপেক্ষা করেন, তবে এটি দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য বিব্রতকর হতে পারে। এছাড়া, রাশিয়া, বেলারুশ ও ইরানের প্রেসিডেন্টদের পাশে দাঁড়ানোও দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য কূটনৈতিকভাবে সমস্যাজনক হতে পারে। আজ প্রেসিডেন্ট লির দপ্তর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
সূত্র : বিবিসি