ফুটবল দল পরিচালনায় দুই ধরনের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকে—ম্যানেজার ও হেড কোচ। অনেক ক্লাব কেবল খেলার কৌশল ও পরিকল্পনা সাজানো, অনুশীলন পরিচালনা করা এবং খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে নজর রাখতে হেড কোচ রাখে। আবার অনেক ক্লাবে ম্যানেজারই দলের সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু—খেলোয়াড় কেনা থেকে শুরু করে ক্লাব পরিচালনার বড় সিদ্ধান্তও তার অধীনে পড়ে।
এই বিভাজন আসলে ক্লাবভেদে ভিন্ন ভিন্ন।
কখনো ম্যানেজার কোচের কাজও করেন, আবার অনেক ক্লাবে কোচকেই কিছু ম্যানেজারিয়াল দায়িত্ব সামলাতে হয়।
উয়েফা লাইসেন্সধারী ফুটবল কোচ পেদ্রো মেন্ডোকা বলেন, ‘কোচের মূল ফোকাস সব সময় খেলার ভেতরেই থাকে। প্রতিপক্ষ বিশ্লেষণ, অনুশীলনের কৌশল, আর কিভাবে পরের ম্যাচ জেতা যায়, তা নজরে রাখেন তিনি। অন্যদিকে ম্যানেজার শুধু মাঠের অনুশীলন নয়, দল গঠন, অবকাঠামো উন্নয়ন, খেলোয়াড় কেনাবেচা ও স্কাউটিংয়েও জড়িত থাকেন।
’
ইউরোপজুড়ে এ ভিন্নতা ভালোভাবেই চোখে পড়ে। যেমন, রিয়াল মাদ্রিদে ট্রান্সফার নীতির দায়িত্ব থাকে ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের হাতে। ফলে কোচ কেবল কৌশল নিয়েই ভাবতে পারেন। বিপরীতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন ক্লাব পরিচালনার সব ক্ষেত্রে সক্রিয় ছিলেন।
কোচ থেকে ম্যানেজার হওয়ার যাত্রা
ক্যারিয়ারের শুরুতে বেশির ভাগ কোচই অনুশীলন ও খেলার খুঁটিনাটিতেই সময় দেন। কিন্তু বয়স ও অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা ম্যানেজারের ভূমিকায় রূপ নেন। উদাহরণ হিসেবে জোসে মরিনহোর নাম টেনে আনেন মেন্ডোকা।
তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে মরিনহো ওয়ার্মআপ থেকে শুরু করে অনুশীলনের প্রতিটি অংশ সামলাতেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে তিনি দায়িত্ব ভাগ করে দিতে শুরু করেন, ট্রান্সফার ও আলোচনাতেও সরাসরি জড়িত হন।
’
জার্মানির ‘রেড বুল’ মডেল
আধুনিক ফুটবলে আর্থিক চাপের কারণে নতুন ধরনের কাঠামো দেখা যাচ্ছে। জার্মান ক্লাব আরবি লাইপজিগে ম্যানেজাররা ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছেন স্পোর্টিং ডিরেক্টরে। এতে দায়িত্ব ভাগ হয়, আবার নতুন দৃষ্টিভঙ্গিও আসে।
জার্মান ফুটবল বিশ্লেষক জাসমিন বাবা বলেন, ‘রেড বুল–স্কুল অফ থট ফুটবলে বড় প্রভাব ফেলেছে। তাদের খেলার ধরন অনেক দ্রুত রূপান্তর–ভিত্তিক, আক্রমণ থেকে রক্ষণ, রক্ষণ থেকে আক্রমণে মুহূর্তে পাল্টে যায় খেলার চিত্র।’
বদলে যাওয়া ফুটবল
আধুনিক ফুটবলে শুধু কোচ আর ম্যানেজার থাকলেই আর হয় না। এখন আছে স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ, নিউট্রিশনিস্ট, বিশ্লেষক ও ট্রেনিং বিশেষজ্ঞরা। সাবেক ব্রিস্টল রোভার্স কোচ অ্যান্ডি ম্যানগান বলেন, ‘ফুটবল বদলে গেছে। এখন প্রতিটি ক্লাবে পুরো একটি টিম কাজ করে, যেখানে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে খাদ্যাভ্যাস পর্যন্ত দেখা হয়।’