যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত থেকে আমেরিকায় রপ্তানিতে ২৫% শুল্ক ধার্য করেছিলেন এবং এরপর রাশিয়া থেকে তেল কেনা দেশের জন্য সেটি দ্বিগুণ করে ৫০% করা হয়, তখন থেকেই ভারতীয় ব্যবসাগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতকে (ইউএই) বিকল্প হিসেবে খুঁজতে শুরু করেছে। এই শুল্ক গতকাল বুধবার (২৭ আগস্ট) থেকে কার্যকর হয়েছে।
ব্যবসা স্থাপন ও সহায়তা পরামর্শদাতা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ট্রাম্পের ঘোষণা পরবর্তী সময়ে ভারতীয় ব্যবসাগুলো ইউএইতে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইউএইতে একটি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটের সিইও বলেছেন, প্রথম ২৫% ঘোষণার পরও অনেকেই আশা করছিলেন এটি শুধু ট্রাম্পের আলোচনার কৌশল।
কিন্তু দ্বিতীয় ২৫% ঘোষণার পর স্পষ্ট যে মার্কিন ও ভারত সরকারের মধ্যে কোনো চুক্তি হবে না। ফলে অনেক ভারতীয় ব্যবসা, যারা মার্কিন বাজারে রপ্তানি করে, তারা এখন ইউএইতে যৌথ উদ্যোগ বা বিনিয়োগের কথা ভাবছে।
এ ছাড়া এই একই পরিস্থিতি ইউএইয়ের গহনাশিল্পে দেখা যাচ্ছে। আরো অনেক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এখন গহনার ডিজাইন ও উৎপাদন কেন্দ্র ইউএইতে স্থাপন করতে চাইছে, যাতে সরাসরি ভারত থেকে আমেরিকায় রপ্তানি না করতে হয়।
যদি ৫০% শুল্ক স্থায়ী হয়, ভারতের গহনা রপ্তানিকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক যুক্ত হলে মার্কিন বাজারে তাদের পণ্য ‘দামের কারণে অযোগ্য’ হয়ে যাবে।
দুবাইভিত্তিক গহনা ব্যবসায়ী আনাইল ধানক (কানজ জুয়েলস) সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মার্কিন শুল্ক নিয়ে এখনো অপেক্ষা করা উচিত।
কারণ ট্রাম্প সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন। কানজ কোনো যৌথ উদ্যোগ খুঁজছে না; আমরা চাই স্পষ্টতা আসুক। উচ্চ সোনার দামের কারণে আমরা বর্তমানে খরচ মেটাতে লড়াই করছি এবং নতুন কোনো প্রতিশ্রুতি চাই না।’
ভারতের শ্রমনিষ্ঠ রপ্তানি খাত এখন তাদের বৃহত্তম বাজারে বড় প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি। এসপিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজিং পার্টনার স্টিফেন ইনেস বলেন, ‘এটি শুধু শুল্ক নয়, এটি যেন তাদের দীর্ঘদিনের বাসস্থান থেকে উচ্ছেদের নোটিশ।
’
তবে ট্রাম্পের শুল্ক ভারত থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল ও প্রযুক্তি-সম্পর্কিত পণ্যের ওপর প্রযোজ্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপল আইফোন ভারতের কারখানা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে শুল্ক দিতে হবে না।
ইউএইতে উৎপাদন স্থানান্তর : শুল্কে বড় সুবিধা
যদি ভারতীয় গহনা উৎপাদকরা মার্কিন বাজারের জন্য উৎপাদন ইউএইতে স্থানান্তর করেন, তবে রপ্তানিতে শুল্ক হবে ৫০% নয়, মাত্র ১০%। তবে এটি কেবল তখনই প্রযোজ্য, যদি উৎপাদন এবং মূল্য সংযোজন ইউএইতে হয়, বলেছেন বারজিল জিওজিট ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের সিইও কৃষ্ণন রামাচন্দ্রন।
সোভরেইন গ্রুপের সিনিয়র বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার আকসানা সুকার বলেন, ‘ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সব সময়ই ইউএইতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এই বছরের জানুয়ারি থেকে মোট ব্যবসা স্থাপনের অনুসন্ধানের প্রায় ৫%ই এখানে এসেছে। যারা মার্কিন বাজারে রপ্তানি করে, তারা এখন বিবেচনা করছে কোথায় উৎপাদন ও শিপমেন্ট হবে, যাতে সবচেয়ে সুবিধাজনক শুল্ক পাওয়া যায়। ইউএই এমন একটি শক্তিশালী বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।’
এখন অনেক ভারতীয় ব্যবসা ইতিমধ্যেই ইউএইতে নিজেদের উপস্থিতি তৈরি করেছে, বিশেষ করে টেক্সটাইল ও পোশাক, ধাতু ও প্রকৌশল পণ্য, রাসায়নিক, ফার্মাসিউটিক্যাল এবং আইটি সেবার খাতে। এমসিএ গালফের ম্যানেজিং পার্টনার ভেঙ্কটেশ সন্থানম বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলো সুবিধা নিতে ভালো অবস্থানে আছে।’
সূত্র : খালিজ টাইমস