আবরারের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক

SHARE

ভারতের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল, বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত, তুহিনসহ শিশুহত্যার বিচার এবং দুনীর্তি, ক্যাসিনো বাণিজ্য, সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব বন্ধের দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল গণসংগঠনসমূহ।

দেশের ক্রিয়াশীল প্রগতিশীল সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ আজ মঙ্গলবার আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে ভারতের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল, বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকারিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে পাঁচ বছরের শিশু তুহিনের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্তদের বিচার এবং ক্যাসিনো বাণিজ্য, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক ভারত সফরে সে দেশের ক্ষমতাসীন সরকারের সাথে ৭টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করে এসেছেন। এসব চুক্তি ও সমঝোতায় বাংলাদেশের অনুকুলে কোন কথা নেই। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে বাংলাদেশের মানুষ আশা করেছিল দীর্ঘ দিনের কাঙ্খিত তিস্তা নদীর পানি বন্টন এবং বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায়, রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকারের কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ, সীমান্তে বিএসএফের হত্যাযজ্ঞ বন্ধ ও সেখানে চলমান এনআরসি কর্মসূচি সম্পর্কে ভারতের বক্তব্য প্রভৃতি বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকবে। কিন্তু বাস্তবে ভারত সরকার সেদিকে না গিয়ে কৌশলে বাংলাদেশের মানুষের কাঙ্খিত বিষয়সমূহকে উপেক্ষা করে মৌখিক দায়সারা আশ্বাস দিয়েছে। তাও আবার যৌথ ঘোষণায় স্থান পায়নি। পক্ষান্তরে ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেয়া, বাংলাদেশের আমদানি করা এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারে করে ভারতের কাছে রপ্তানি করা, দেশের উপকূলীয় এলাকায় অন্তত বিশটি স্ট্রাটিজিক পয়েন্টে ভারতের রাডার স্থাপনসহ ভারতকে এক পাক্ষিক সুবিধা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী এসকল অসম চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ভারতের মোদি সরকারের সাথে স্বাক্ষরিত এসকল চুক্তি দুই দেশের জনগণের ভাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, এসকল অসম চুক্তির বিরোধিতা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখায় বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের নেতারা নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ইতোপূর্বেও বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার পর জনমতের চাপে ছাত্রলীগের সেই সব খুনিদের ধরা হয়েছিল। কিন্তু ‘অচিরেই হত্যাকারিরা খালাস পেয়ে যায়। এবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সারা দেশে মানুষ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করায় কয়েকজন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের কি হবে বা গ্রেফতারকৃতরাও ছাড়া পেয়ে যাবে কিনা এ বিষয়ে জনগণ সন্দিহান। একারণে প্রগতিশীল গণসংগঠনসমূহ আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছে। একই সাথে নেতৃবৃন্দ ছাত্রলীগের বেপরোয়া সন্ত্রাসের দায়কে আড়াল করে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে তারও তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে ছাত্র রাজনীতির উপর থেকে সকল ধরণের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহরের দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে সংগঠন সমূহের নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সারা দেশে যে বেপরোয়া সন্ত্রাস, দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বানিয়ে রেখেছে তার খুব সামান্যই আমাদের সামনে আসছে। যুবলীগের নেতাদের ক্যাসিনো বাণিজ্য, টেন্ডারবাজির ঘটনা ইতোমধ্যে দেশবাসি অবগত হয়েছে। কত শত কোটি টাকা একেকজন নেতার রয়েছে তা দেখে জনগণ বিস্মিত, উদ্বিগ্ন। লুটপাটের এ সাম্রাজ্য কত বিস্তৃত ও ভয়ঙ্কর তা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে প্রত্যক্ষ প্রশ্রয় পেয়েই এসব সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে। অনতিবিলম্বে সর্বগ্রাসী এ দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় জনমনে যে তীব্র ক্ষোভ দানা বেঁধেছে তা বিক্ষোভে পরিণত হয়ে সরকারবিরোধী গণআন্দোলনে রূপ নেবে।

যৌথ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ জানান, এসব দাবিতে যৌথ উদ্যোগে আগামী ১৭ অক্টোবর দেশব্যাপী তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করবে এবং ১৯ অক্টোবর ঢাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে শাহবাগে বিকেল ৪টায় সমাবেশ করবে।

যে সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন – বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, প্রগতি লেখক সংঘ, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন, কেন্দ্র বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, ইঞ্জিনিয়ারস এন্ড আর্কিটেক্টস ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট, ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্ট, বাংলাদেশ প্রাইভেট কারস ড্রাইভারস ইউনিয়ন, রণেশ দাশগুপ্ত চলচ্চিত্র সংসদ।