পানিবন্দী মোহাম্মাদবাগ এলাকাবাসী

SHARE

২৪আওয়ার রিপোর্ট :  এক ঘণ্টা বৃষ্টিতেই রাস্তা ডুবে যায়। কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হলে পানি বারান্দায় ঢুকে পড়ে, এরপরে ঘরে। যেন এই পানি ওঠা কোন ঘটনাই না, যেন এমনটাই হবে, এটাই নিয়তি। মোহাম্মাদবাগ এলাকার বাসিন্দারা প্রতি বছর পানিতে বারবার ভাসে। নোংরা পানি বয়ে আনা অসুখে ভোগে। সব আশা ছেড়ে নিরুপায়, অসহায় মানুষগুলো এ পরিস্থিতি বদলানোর আশাও করেন না।  যেন, তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই।

সত্যিই তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। এই জলাবদ্ধতা কাটানোর জন্য, স্যুয়ারেজ লাইন ও পানি সরবরাহের লাইন আধুনিক করার জন্য সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কেউই এই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কোন উদ্যোগ নেয়নি। সরকারি প্রতিষ্ঠানের একে অপরের প্রতি দোষারোপ আর দায়িত্ব গ্রহণের গড়িমসির শিকার হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। মানুষের কী হলো না হলো সেসব নিয়ে কারোরই খুব একটা আগ্রহ নেই।

কয়েক যুগ ধরে বর্ষা মওসুমে জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধ এলাকার অধিবাসীরা। সরকার এখনও পর্যন্ত এই সমস্যার কোনও স্থায়ী সমাধান দিতে পারেনি।

জনপ্রতিনিধিরা তাদের সমস্যা নিয়ে নানা কথা বললেও মানুষের দুর্ভোগ মিটছে না। বরং বর্ষা এলেই সীমাহীন আতংকের মাঝে দিন কাটান মোহাম্মাদবাগ এলাকার বাসিন্দারা। প্রতিবছরই বৃষ্টির মৌসুমে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নেয়। বছরের যে কোন সময়ে এক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই মোহাম্মাদবাগ এলাকার অধিকাংশ রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যায়। নেই পয়ঃনিষ্কাশনের ভাল ব্যবস্থা। বদ্ধ ও নোংরা পানিতে সবসময় চুলকানি, ডায়ারিয়া ও আমাশয়ে ভুগতে হয়।

বিশেষত ১৯৮৮ সালের বন্যার পর এই এলাকায় বসবাসের হার আরও বেড়ে গেছে। এর ফলে বেশিরভাগ কৃষিজমি এখন অপরিকল্পিতভাবে আবাসিক এলাকায় রূপান্তরিত হয়েছে। একইসঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে এই এলাকায়।

সপ্তাহের প্রবল বর্ষণে ডিএনডির অভ্যন্তরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি, ধনকুন্ডা, পাঠানটুলি, দক্ষিণ কদমতলী নয়াপাড়া, পশ্চিম কদমতলী, মিজমিজি, সাহেবপাড়া, পাইনাদি, কালাহাতিয়ারপাড়, সিআইখোলা, পাইনাদী নতুন মহল্লা, মজিববাগ, কুতুববাগ, রসুলবাগ, নিমাই কাসারী, বাগমারা, পশ্চিম সানারপাড়, ডেমরার মাতুয়াইল, মৃধাবাড়ি, কোনাপাড়া, আমবাগান, ভাঙ্গা প্রেস, কাজলা, যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া, রায়েরবাগ, টেংরা, বকসনগরসহ বিভিন্ন এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। হাঁটুপানির নিচে রয়েছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য, স্যুয়ারেজের পানি মিশে একাকার হয়ে গেছে। প্রয়োজনের তাগিদে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি দিয়েই যাতায়াত করায় পানিবাহী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই।

ভুক্তভোগীরা জানায়, অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর, কল-কারখানা, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মিত হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের বেশির ভাগ খাল বেদখল হয়ে গেছে। খালগুলো দিয়ে ডিএনডির অভ্যন্তরের বসত-বাড়ি, রাস্তা-ঘাটে বর্ষায় জমে থাকা পানি প্রধান নিষ্কাশন খালে যেতে না পারায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এলাকাবাসী জানায়, গোদনাইল থেকে মৃধাবাড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটিও ভরাট ও কোথাও কোথাও আগের তুলনায় আরও বেশি জায়গা দখল হয়ে গেছে। শ্যামপুর, তিতাস খালসহ কয়েকটি খালের বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে জলাবদ্ধ  লোকালয়ে।

নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে ডিএনডি পাম্প স্টেশনের উপসহকারী প্রকৌশলী  জানান, এই সমস্যার পেছনে জনসাধারণেরও দায় আছে। অনেকেই ড্রেনে ও খোলা জায়গায় আবর্জনা ফেলে। এর ফলে পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক পথ বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, এমনিতে ১২৮ কিউসেকের চারটি পাম্পই পানি নিষ্কাশনের প্রধান ভরসা। এগুলোর মেয়াদও শেষ কয়েক বছর আগে। এসব পাম্পে মাত্রাতিরিক্ত অপচনশীল আবর্জনা ঢুকে যেকোন সময় পুরো এলাকাবাসীর জন্য বড় ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।