বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থায় রাজনৈতিক নিয়োগ দেওয়া হবে না। অতীতেও বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় এসব প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ কারণে তখন ব্যাংক ধসে যায়নি এবং পুঁজিবাজারে লুটপাট হয়নি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেলের মেজবান হলে চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির উদ্যোগে ‘অপারেশনাল ফ্রেমওয়ার্ক অব কমোডিটি ডিরাইভেটিভ মার্কেট অ্যান্ড ইটস বিজনেস প্রোসপেক্টিভ’ (‘Operational Framework of Commodity Derivatives Market and Its Business Prospects’) শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী এবং চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ কথা বলেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পুঁজিবাজার ভালো করতে হলে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে পুঁজিবাজারের গুণগত মান নিশ্চিত করতে এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। বর্তমানে দেশের জিডিপির তুলনায় পুঁজিবাজারে আকার ছোট। আগামীতে বিএনপি সরকার গঠন করলে পুঁজিবাজারকে ধারণ করবে।
এটির উন্নয়নে সামগ্রিক চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অতিনিয়ন্ত্রণ এবং শক্তিশালী স্বনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় পুঁজিবাজারের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মূল চ্যালেঞ্জ হবে ডেটা। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আর এটিই আগামী দিনের মূল চ্যালেঞ্জ। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন খুবই সক্রিয়। তাই বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পুঁজি বাজার অন্ধকার থেকে পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। অন্ধকারে চালানো পথ বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
আমীর খসরু আরো বলেন, ‘ফিজিক্যাল কন্টাক্ট (শারীরিক সংযোগ) যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ দুর্নীতি থাকবে।
নাগরিকরা ভোগান্তির শিকার হতে থাকবেন। তাই আমরা বিনিয়োগ বোর্ডেও একই কাজ করতে যাচ্ছি। আগামী দিনের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের মধ্যে শারীরিক সংযোগ যেন সরকারের সঙ্গে মানুষকে করতে না হয়, সে জন্য বিএনপি সব করবে। গ্রাহকরা যাতে বাড়িতে বসে সব কিছু করতে পারে এবং বাড়িতে সব কিছু পৌঁছে যায় সে ব্যবস্থাও করা হবে।’
বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বলেছি, আপনাদের একজন করে নেতা দেব। যুবক ছেলে-মেয়েরা ট্রেনিং করে বিনিয়োগকারীদের হয়ে বিনিয়োগের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখভাল করবে। বিনিয়োগকারী সরকারি অফিসে যাবেন না। বিনিয়োগকারী কোরিয়া বা আমেরিকায় বসে তার কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের মনিটরে তদারকি করবে তার ফাইল কোথায় যাচ্ছে। এটি প্রতিদিন আপডেট হবে। এটার টাইম ফ্রেম থাকবে। এটার সাথে Commodity Derivatives Market এর একটা সম্পর্ক থাকবে।’
সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিমানবন্দরে এলে কেউ যদি আধাঘণ্টার মধ্যেই বের না হয়, তাকে অবশ্যই এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে। চিটাগাং পোর্টে মাল এলে টার্ন এরাউন্ড টাইম কনটেইনার বের হতে হবে। যদি সব কিছু অটোমেশন করে অনলাইনে দিয়ে দেয়া যায় তাহলে বাংলাদেশে বিদেশিরা এখানে কনফিডেন্স পাবে। পোর্টফোলিও ম্যানেজাররা বসে আছে। আমরা তাদের সাথে কথা বলছি। এই পরিবর্তনটা আনতে হলে, আমাদের ওয়ার্ল্ডের বেস্ট প্রাকটিসগুলো আছে সারা দুনিয়াতে তা বাংলাদেশে নিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, আগে তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানির প্রাপ্যতার অনুমোদন (ইউডি) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে নেওয়া লাগতো। এতে আমদানিকারকদের দীর্ঘ সময় লাগতো, নানা জটিলতায় পড়তে হতো। কিন্তু আমি যখন বাণিজ্যমন্ত্রী হয়েছিলাম, তখন এই অনুমোদনের বিষয়টি তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর কাছে দিয়ে দিই। এতে প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ হয়ে যায়।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের বাজারেও কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কার্যক্রম চালু হলে বিনিয়োগের সুযোগ ও বাজার গভীরতা বৃদ্ধি পাবে। সিএসইর শেয়ার হোল্ডার পরিচালক আকতার পারভেজ বলেন, মানুষের মনে শেয়ার বাজার নিয়ে আগে থেকে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। বর্তমানে সেটি আরো বেড়েছে। এ নেতিবাচক ধারণাকে বদলাতে হবে। এটি হতে পারে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ মার্কেটের যাত্রার মাধ্যমে। এটি সফলভাবে চালু করা গেলে সব নেগেটিভ ধারণা বদলে যাবে। এটির মাধ্যমে শেয়ার বাজারে বড় পরিবর্তন আসবে।