বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ৫ প্রকল্প অনুমোদন

SHARE

cabinet18বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ পাঁচ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২০৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মঙ্গলবার এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সফিকুল আজম, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খানসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘রাজশাহী জোনে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দুই লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া যাবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্ভরতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিতকরণ, বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান পাওয়ার সিস্টেমের গুণগতমান এবং বিতরণ ব্যবস্থা উন্নতকরণ, আবাসিক ও শিল্প কারখানায় নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, বিদ্যুতের প্রতিবন্ধক ও ফ্রিকোয়েন্সি ভেরিয়েশন হ্রাসকরণ এবং উন্নত লাইন ও সাব স্টেশন নির্মাণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা সহজেই সম্ভব হবে।’

একনেক অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, জামালপুর টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসারদের জন্য শহীদ শেখ রাসেল আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণ, এটি বাস্তবায়নের ব্যয় ৮৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও বিস্তার এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ কোটি ২ লাখ টাকা এবং বরিশাল বিভাগ ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০১ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

রাজশাহী জোনে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের বিস্তারিত হচ্ছে, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১৮ কোটি ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাজশাহী বিদ্যুৎ বিতরণ জোন রাজশাহী বিভাগের আট জেলার ৬০টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ জোনের আয়তন প্রায় ১৬ হাজার ৪৯৩ বর্গ কিলোমিটার এবং লোক সংখ্যা প্রায় ২১ দশমিক ৭ মিলিয়ন। এ এলাকা কৃষি এবং শিল্পভিত্তিক। কৃষি কার্যক্রমে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জোনে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন নতুন রাইচ মিল, কোল্ড স্টোরেজ, পোল্ট্রি ফার্ম এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠছে। এ ছাড়া বড় বড় শপিংমল, ব্যবসা কেন্দ্র ও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। পাবনায় একটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা স্থাপন করা হয়েছে। দেশী-বিদেশী অনেক কোম্পানি সেখানে শিল্প কারখানা স্থাপন করছে। এ কারণে দিন দিন বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে।

রাজশাহী অঞ্চলে কয়েকটি পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট, ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট ও রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। ওই সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিদ্যমান বিতরণ লাইনের মাধ্যমে বিতরণ করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া সরকারের ভিশন অনুযায়ী ২০২১ সালে সকলের জন্য বিদ্যুৎ প্রদানের লক্ষ্যে রাজশাহী জোনে বিদ্যমান দুর্বল বিতরণ অবকাঠামোর উন্নয়ন করা প্রয়োজন। এ জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।

বরিশাল বিভাগ ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের বিস্তারিত হচ্ছে- ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ৩৩টি উপজেলায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নের এলাকাগুলো হচ্ছে, বরিশাল জেলার বানারীপাড়া, উজিরপুর এবং বরিশাল সদর উপজেলা। ঝালকাঠি জেলার নলছিটি, কাঠালিয়া, রাজাপুর এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলা। ভোলা জেলার মনপুরা, চরফ্যাসন, লালমোহন, তজুমুদ্দিন, বোরহারউদ্দীন, দৌলতখান এবং ভোলা সদর উপজেলা। পটুয়াখালী জেলার দুমকী, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া, দশমিনা, গলাচিপা, বাউফল এবং পটুয়াখালী সদর উপজেলা। বরগুনা জেলার পাথরঘাটা, বামনা, বেতাগি, আমতলী এবং বরগুনা সদর উপজেলা। পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর, নেসারাবাদ, নাজিরপুর, মঠবাড়ীয়া, কাউখালী, ভাণ্ডারিয়া এবং পিরোজপুর সদর উপজেলা।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ২৫০ কিলোমিটার খাল বা নালা পুনঃখনন, ৬৬টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, ৬৬টি ক্যাটল ক্রসিং নির্মাণ, ৬০ সেট এক কিউসেক লো-লিফট পাম্প ক্রয় ও স্থাপন, ১৪০ সেট দুই কিউসেক লো-লিফট পাম্প ক্রয় ও স্থাপন, ৮০টি প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে স্থাপিত ২ ও ৫ কিউসেক এলএলপির জন্য ভূ-উপরিস্থ সেচনালা সম্প্রসারণ, ৯৫টি বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ, ৫০টি ফিতা পাইপ ক্রয় একটি অফিস ভবন নির্মাণ। এ ছাড়া ৬০০ জন কৃষক, ম্যানেজার, অপারেটর ও ফিল্ডম্যানকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।