শুনছিলাম, ব্রায়ান লারা নাকি শুধুই সিডনির স্পোর্টস স্টুডিওতে বসে বিশেষজ্ঞের ভূমিকা পালন করছেন৷ সকালবেলা বন্ডাই বিচে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা গেলেও, বাকি সময়টায় থাকছেন অধরা৷ এমন ব্যস্ত ব্রায়ান লারাকে, মেলবোর্ন ক্রিকেট মাঠে, প্রি-লাঞ্চ শো-এ অংশগ্রহণ করতে দেখব, তা ভাবতেই পারিনি৷ ভারত বনাম বাংলাদেশ ম্যাচ শুরু হতেই চলে এসেছিলেন তিনতলার কমেন্ট্রি বক্সে৷ ‘খিদে পেয়েছে? লাঞ্চ রুম কোথায়?’ দুটি জরুরি প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাওয়ার পর হাঁটতে শুরু করেছিলাম৷ মার্ক ওয়া, ড্যামিয়েন ফ্লেমিং, রায়ান হ্যারিসরা ততক্ষণে মিডিয়া ডাইনিং হলে পৌঁছে গিয়েছিলেন৷ খাওয়া-দাওয়ার পর, কিছুক্ষণ গ্যালারিতে বসে খেলা দেখলাম৷ পরে কমেন্ট্রি বক্সের পাশের ওয়েটিং রুমে৷
বাংলাদেশ তখন জাঁকিয়ে বসতে চাইছিল৷ ব্রায়ান লারা বললেন, ‘তুলনায় ছোট দলগুলো টানা ৫০ ওভার ভালো খেলতে পারে না৷ হঠাৎ হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো, ওরা, মাঝেমধ্যেই চমকে দিতে চায়৷ তবে, বাংলাদেশ কিন্তু ভালো খেলল এখানে৷ প্রচুর উন্নতি করেছে৷ রুবেল ছেলেটাকে কিন্তু বেশ তীক্ষ্ণ মনে হলো৷’
ভিভের মেয়ে মাসাবা-র তো বিয়ে, জানেন? কদিন আগে এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠান হয়ে গেল মুম্বাইয়ে….৷
ব্রায়ান লারা: তাই? কই ভিভ তো বলল না!
ভিভ নিজেও ওই অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি৷ ভিডিওর মাধ্যমে নিজের বার্তা পাঠিয়েছেন৷
ব্রায়ান লারা: এটা তো একটা ক্লাসিক ব্যাপার৷ বিশ্বকাপের জন্য ব্যস্ত থাকায় হয়তো যেতে পারেনি৷ এমন একটা সময় অনুষ্ঠানটা তো আয়োজন না করলেই পারত, তাই না? আগে বা পরে করলে, বাবা হিসেবে ভিভ কিন্তু থাকতে পারত৷
নীনা গুপ্তর সঙ্গে ভিভের কিন্তু বিচ্ছেদ হয়ে গেছে?
ব্রায়ান লারা: তাই? জানতাম না তো!
নীনা আবার বিয়ে করেছেন৷
ব্রায়ান লারা: আবার বিয়ে? মানেটা কী? ভিভ তো কখনই নীনাকে বিয়ে করেনি৷
তা করেনি ঠিকই৷ দু’জনেই কিন্তু প্রচণ্ড ঘনিষ্ঠ ছিল৷ যা ছিল বিয়ে করা দম্পতির থেকেও ঠাস বুনোট৷
ব্রায়ান লারা: কখন যে কী হয়ে যায় মানুষের! তবে, ভিভের সঙ্গে আমার এ ব্যাপারে কোনো দিনও কথা হয়নি৷
গারফিল্ড সোবার্স কেমন আছেন?
ব্রায়ান লারা: ভালো৷ ৭৮ বছর বয়স হয়ে গেল! কথা হয় মাঝেমধ্যে৷
দুপুরে তো এখনও ঘোড়দৌড় দেখেন?
ব্রায়ান লারা: দীর্ঘদিনের অভ্যাস৷ সন্ধ্যার পর থেকেই বাড়িতে কাটান৷
আমরা অন্য ব্যাপারে চলে গিয়েছিলাম৷ দুটো প্রশ্ন অনেক দিন ধরে ভেবে রেখেছিলাম…৷ আপনি নাকি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হতে চান?
ব্রায়ান লারা: এবার তো হতে পারলাম না৷ মন স্হির করার পর যখন মনোনয়নপত্র জমা দেব বলে ভাবছি, শুনলাম, এক মাস আগেই ওই তারিখ পেরিয়ে গিয়েছে৷
আপনার ব্যাটিং সম্পর্কেও বলা হয়ে এসেছে, আলসেমিতে ভরা মাধুর্য৷ ভোটে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রেও তো তা-ই করলেন৷
ব্রায়ান লারা: (হেসে), হ্যাঁ নানা কাজের জন্য দেরি করে ফেলেছিলাম৷ ঠিক আছে, দুই বছর পর, দাঁড়ানোর প্রস্তুতি আগের থেকে নেব৷ ঘোঁতঘাঁত এর মাঝে বুঝে নেব৷
ভেবে দাঁড়াবেন৷ সময় দিতে পারবেন? জোয়েল গার্নার তো সময় দিয়েও হেরে গেলেন৷…৷
ব্রায়ান লারা: চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর, নিজের গ্রুপ তৈরি করে আঁটঘাট বেঁধেই নামব৷ ডোন্ট ওরি…৷
দ্বিতীয় প্রশ্নটা হলো, সর্বকালের সেরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিম গড়তে গিয়ে নিজেকে কোচ হিসেবে রেখেছেন৷ কিন্তু, স্যর এভার্টন উইকসকে রাখেননি৷
ব্রায়ান লারা: ওটা তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বকালের সেরা ওয়ান ডে টিম, টেস্ট দল নয়৷ টেস্ট দলে তো স্যর এভার্টনকে রাখতেই হবে৷
আর আপনি?
ব্রায়ান লারা: নিজে নির্বাচক হয়ে ব্রায়ান লারাকে রাখব কীভাবে?
এবার আপনার পরিবার সম্পর্কে বলুন…৷
ব্রায়ান লারা: বিয়ে এখনও করিনি৷ কিন্তু সিডনির পর আর একটি কন্যা হয়েছে৷ নাম রেখেছি টাইলা৷
সিডনি কত বড় হলো?
ব্রায়ান লারা: স্কুলজীবন শেষ হল বলে৷ বিগ গার্ল৷
আপনার জন্মদিনও এসে গেল…৷
ব্রায়ান লারা: হ্যাঁ, এবার আর ত্রিনিদাদ বা লন্ডন নয়, বার্বাডোজের বন্ধুরা এবার বার্বাডোজেই আমার জন্মদিন পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷
বিশ্বকাপে ফিরছি৷ ভেবেছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারবে না?
ব্রায়ান লারা: না, এখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজ এত খারাপ দল হয়ে পড়েনি যে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না৷ আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়াটা, রিয়েল শকিং৷
এমন অবস্হা দাঁড়িয়েছে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অধিনায়কের নাম অনেকেই, এক কথায়, বলতে পারবেন না?
ব্রায়ান লারা: সবাইকে ছেড়ে জেসন হোল্ডারকে আসামি ভাবাটা ঠিক হবে না৷ বাচ্চা ছেলে৷ এখনও জেসন বখে যায়নি৷ সবাই মিলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে, জেসন অধিনায়ক হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারে৷
এবার, তা হলে, বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হবে কোন দেশ?
ব্রায়ান লারা: সম্ভাবনা বেশি অস্ট্রেলিয়ার৷ সিডনিতে ধোনিরা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিলে, ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে৷
অন্য প্রসঙ্গ৷ আপনার গল্ফ কেমন চলছে?
ব্রায়ান লারা: খুব ভালো৷ এপ্রিলে দুবাইয়ে আইকন কাপ খেলতে যাব৷ আমেরিকা বনাম রেস্ট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড। ম্যাজিক জনসন খেলবে আমেরিকার হয়ে৷ অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশে থাকব আমি, ডোয়াইট ইয়র্ক, লুই ফিগো এবং কপিলদেব৷
দেবাশিস দত্ত: ভারতীয় সাংবাদিক।