দেশে চলমান হরতাল-অবরোধের ৫৭ দিনে ক্রসফায়ারে ১১৪ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে ১১৩ জন। এর মধ্যেই খবর এসেছে তিতুমীর কলেজের নিখোঁজ ছাত্র মেহেদী হাসান রুবেলের লাশ তার এলাকায় পাওয়া গেছে। এতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১১৪ জনে।”
তিনি বলেন, “দেশ এক প্রকার অচল হয়ে আছে। একদিকে চলছে জনগণের প্রতিরোধ আন্দোলন, অবরোধ-হরতাল, অন্যদিকে সরকারি বাহিনীর বন্দুকের গুলিতে-সহিংসতায় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত আর দগ্ধ মানুষের সারি, সরকারি সব বাহিনীর অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা প্রয়োগ। চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে দমনে নামে সরকারি বাহিনী সরাসরি বুকে গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। হত্যার পর সেই পুরনো পন্থায় বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারে নিহতের হয়েছে বলে মিথ্যা কল্পকাহিনীর প্রচার করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ‘ক্রসফায়ার’ ও ‘বন্দুকযুদ্ধে’র নামে বিচার বহির্ভূত হত্যা চলছে বেপরোয়াভাবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবেই রাজনৈতিক কর্মীদের গাড়ির নিচে চাপা দিয়ে কিংবা সারা শরীরে অসংখ্য গুলিবিদ্ধ মৃত ব্যক্তিকে গণপিটুনিতে মৃত বলে দেখানো হচ্ছে। অবরোধের ৫৭ দিনে সহিংসতা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে অর্থাৎ তথাকথিত ক্রসফায়ারে মোট ১১৪ জন নিহত হয়েছে।”
রুহুল আমিন গাজী বলেন, “দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ার উপক্রম। সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া হিসাবেই চলমান সংকটে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, এই ভয়াবহ সংকট সমাধানের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। জাতিসংঘসহ আন্তজাতিক বিশ্ব এবং দেশের সর্বমহল থেকে সংকট সমাধানে দুই রাজনৈতিক পক্ষকে দ্রুত সংলাপে বসার আহবান জানালেও এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কর্ণপাতই করা হচ্ছে না। সরকার একটি ন্যায্য রাজনৈতিক আন্দোলনকে ধ্বংসাত্মক বা সন্ত্রাসী কর্মকা- হিসেবে চিহ্নিত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের একগুঁয়েমির কারণে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। অস্ত্রের ভাষা যে রাজনীতির ভাষা হতে পারে না, সে কথা কিছুতেই তারা বুঝতে চাচ্ছে না। ফলে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে গোটা জাতি-আজ চিন্তিত। আতংক, অনিশ্চয়তার অন্ধকার থেকে মানুষের মুক্তি মিলছে না । চারদিকে এক দমবন্ধ অবস্থা। ”
তিনি বলেন, “আজকের সংকটের মূল উৎস গত বছরের ৫ জানুয়ারির ভুয়া নির্বাচন। ওই নির্বাচনটির আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছিলেন, ‘সংবিধানের বাধ্যবাধকতার কারণে এটা একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। সবার সঙ্গে আলোচনা করে আবার পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন করা হবে।’ তাই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রধানমন্ত্রীর মতেই ছিল অপূর্ণাঙ্গ, অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির কথা তিনি বেমালুম ভুলে গেছেন। এ বিষয়ে তাকে বিভিন্ন মহল থেকে বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়া সত্ত্বেও তিনি তা মানতে নারাজ। গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন হতে হবে এ সহজ কথাটি তিনি কিছুতেই বুঝতে চাচ্ছেন না। তিনি সংকট সমাধানের জন্য অপরিহার্য বিষয় গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ইস্যুটিকে বাদ দিয়ে গণআন্দোলনকে পুলিশের মাধ্যমে দমনের নামে এক ধরনের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কায়েম করেছেন। ফলে দেশ আজ হত্যা, গুম আর ধ্বংসের রাজনীতিতে মেতে উঠেছে। এ অবস্থায় মরছে সাহসী যুব সমাজ ও ভুগছে সাধারণ মানুষ। ”
গাজী বলেন, “চলমান সংকটের সমাধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেই। তিনি নতুন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাকে সেই প্রতিশ্রুতি দেশের স্বার্থেই বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা পেশাজীবীরাই শুধু নয়, দেশের যেকোনো একজন নগণ্য নাগরিকও বলতে পারবেন যে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনটি দিলে অশান্ত পরিস্থিতি বা অপতৎপরতা চালানোর সুযোগ কারোর জন্য থাকবে না।”
গাজী বলেন, “কিন্তু সমাধানের এ সহজ পথে না গিয়ে ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ এখন নির্ভর করছে মূলত রাষ্ট্রীয় শক্তির ওপর। নির্বিচারে মামলা, গ্রেফতার, হত্যা ও হামলা চলছে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর দ্বারা। এসব বাহিনীতে পছন্দসই ব্যক্তিদের উঁচু আসনে বসিয়ে একটি কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে। বাহিনীগুলোর নেতৃত্বে থাকা এসব ব্যক্তি সরাসরি হত্যার নির্দেশ দিচ্ছেন, আইন বহির্ভূত ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন এবং সীমাহীন নানা সুবিধা ভোগ করছেন।”
এই সাংবাদিক নেতা বলেন, “বিচার বহির্ভূত হত্যার পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গুমও করে ফেলা হচ্ছে। এসব ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গুপ্ত হত্যা এবং নির্যাতন করা হচ্ছে। নির্যাতনের ক্ষেত্রে পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে ফেলা হচ্ছে। রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে পায়ে গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে যাওয়া চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিএনপি ও ২০দলীয় জোটের শরীকদের শীর্ষ স্থানীয় ২,৮০০ জনের তালিকা তৈরি করে তাদের গ্রেফতার, গুম, অপহরণ এবং ক্রসফায়ারের নামে ঠাণ্ডা মাথায় বিচার বহির্ভূত হত্যার পরিকল্পনা করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি শাসকদলের লোকজনও হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। ”
গাজী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি যে, দখলদার সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ চিরদিনের জন্য দেশের একচ্ছত্র ক্ষমতার মালিক হওয়ার লক্ষ্যে এক ভয়ঙ্কর নীলনকশা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে। এই নীলনকশার অংশ হিসেবে তারা তিনবারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তার প্রিয় সংগঠন দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং ২০ দলীয় ঐক্যজোট তথা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন অর্থাৎ শেষ করে দিতে চাইছে। প্রথমেই তারা টার্গেট করেছে খালেদা জিয়াকে। পেট্রলবোমা বিস্ফোরণ ও যানবাহন ভাঙচুর-আগুনের ঘটনায় তাকে হুকুমের আসামি করে দেশব্যাপী অসংখ্য মামলা দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। তার বাসভবনের পুলিশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। সর্বশেষ পুলিশ তার গুলশান অফিসে তল্লাশি চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছে।”
তিনি বলেন, খারেদার ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টির জন্য কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনের নামে কখনও ভাড়া করা লোক, কখনও দলীয় ক্যাডার ও স্কুলের শিশুদের জোরপূর্বক এনে উৎপীড়ন করা হয়। নৌমন্ত্রীর নেতৃত্বে তথাকথিত শ্রমিক পেশাজীবীদের দিয়ে কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি, গুলশান অফিস লক্ষ্য করে ইট, ককেটল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে তাকে হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শনের অপচেষ্টা করা হয়। সরকার কতটা অমানবিক তার নিষ্ঠুর উদাহরণ হচ্ছে খালেদা জিয়া ও তার সঙ্গের লোকদের অভুক্ত রাখার জন্য গুলশান অফিসে খাবার সরবরাহ পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা খালেদা জিয়াকে ‘খুনী, ‘জঙ্গি, সন্ত্রাসী, দানব, আততায়ী, আল কায়দা, আইএস- মুখে যখন যা আসছে তা-ই বলে যাচ্ছে। দীর্ঘ নয় বছরের স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার অসামান্যও অবদান রয়েছে। দেশের উন্নয়নে তার ভূমিকা অতুলনীয়। বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার মতো একজন বিশাল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে এ ধরনের গালমন্দ করতে তাদের বিবেকে এতটুকু বাধছে না। এটা কি তার প্রাপ্য?”
গাজী বলেন, “বিএনপি এবং একই সঙ্গে জোটের শরীক জামায়াতকে ‘সন্ত্রাসী-জঙ্গি’ সংগঠন আখ্যায়িত করে টানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ দুটি রাজনৈতিক দলকে নির্মূল করতে সরকার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। বিএনপি ও জামায়াতের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর সব অফিস আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়। গত দু’মাস ধরে সরকার দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়, মহানগর ও জেলা কার্যালয়, শাখা ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়সহ সব পর্যায়ের কার্যালয় বন্ধ এমনকি খালেদা জিয়ার কার্যালয়ও অকার্যকর করে দেয়। নেতাকর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ প্রায় অসম্ভব। মহাসচিব ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে প্রায় ১৫ হাজার নেতাকর্মী আজ গ্রেফতার। বাকিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নেতাকর্মীদের নামে শত শত মামলা দেয়া হয়েছে। ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ এবং গুলিতে হত্যা তথা বিচার বহির্ভূত হত্যার ভয়ে নেতাকর্মীরা মিছিল করতে পারছে না এবং সরকারও কোনো প্রকার মিছিল সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না। মিছিল বা বিক্ষোভ করার কর্মসূচি দিলে পুলিশ আগেই নিষেধাজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়ে বলে দেয়- গুলি করা হবে। রাজনৈতিক দলের ওপর এমন দমন-পীড়ন অতীতে কখনও দেখা যায়নি। বল প্রয়োগ করে সরকার জনগণকে এমন বার্তাই দিচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী পন্থী সংগঠন ছাড়া এদেশে আর কোন দল বা সংগঠনের অস্তিত্ব থাকবে না কিংবা তারা রাজনীতি করতে পারবে না। বিরোধী দল ও বিরুদ্ধ মত এভাবে জব্ধ করে সরকার বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিটি সিটি কর্পোরেশনের এক তরফা নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত বিএনপি সমর্থন মেয়রদের নামে মামলা দিয়ে ও গ্রেফতার করে তাদের অপসারনের মাধ্যমে সেগুলোও আওয়ামী দখলে নেয়া হচ্ছে। গণতন্ত্রহীন দুঃসহ এই ফ্যাসিবাদী শাসনে বর্তমানে এক দমবন্ধ অবস্থা মোকাবেলা করছে জনগণ। ”
গাজী বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি এলাকায় লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের পৈশাচিক হত্যার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বইমেলার কারণে টিএসসি এলাকায় বিপুল লোক সমাগম ছিল এবং সিসি ক্যামেরার আওতায়,ঘটনাস্থল ও আশপাশে অস্ত্র হাতে পুলিশ সদস্যরা টহলে ছিলেন। এমন একটি অবস্থায় অভিজিৎ রায় কী করে খুন হলেন এবং খুনিরা কী করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে গেল তা নিয়ে সবার মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। খুনের ঘটনার পরপরই সরকারের মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলে দিলেন মান্না ও খোকার কথোপকথনে লাশ ফেলার কথা ছিল। এটা নাকি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাদের প্রথম লাশ ফেলা। আমরা মনে করি ঘটনাকে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করার জন্যই ক্ষমতাসীনরা বিভিন্ন কথা বলছেন। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে অবিলম্বে আমরা খুনি চক্রের বিচার দাবি করছি।”
পেশাজীবী এই নেতা আরো বলেন, “দেশের গণমাধ্যম আজ অবরুদ্ধ। স্বৈরশাসক, সামরিক ও ফ্যাসিবাদী শাসক এবং একনায়কদের কাছে গণমাধ্যম সব সময়ই ত্রাস। তাই ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রোষানলে পড়ে গণমাধ্যম। এ সময় দৈনিক আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামী টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হয়। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সত্য প্রকাশের কারণে দু’বছর ধরে জেলে বন্দী করে রাখা হয়েছে। এর আগেও তাকে ১০ মাস কারাবন্দী করে রাখা হয়। মামলা দেয়া হয় সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ছয় বছরে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ অন্তত ২৪ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছে। গণমাধ্যম বন্ধের কারণে আজ হাজার হাজার সাংবাদিক বেকার হয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। গত বছরের ৫ জানুয়ারির ভুয়া নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন হয়ে সরকার গণমাধ্যমের কোনো সমালোচনাই সহ্য করতে পারছে না। গণমাধ্যমের উপর সরকারের অন্যায় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকরা বিবৃতি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদপত্র ও জাতীয় প্রচার মাধ্যমের পক্ষে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সংসদে সম্পাদক ও প্রকাশকদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়া হয়েছে যা তাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ। কোনো কোনো পত্রিকা বা টেলিভিশনকে অন্যায়ভাবে বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর মুখপাত্র হিসেবে তকমা দেয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি, সম্পাদকদের এই উদ্বেগ সময়োপযোগী। গণমাধ্যমের হাত পা সরকার বেঁধে ফেলেছে। অলিখিত প্রেস অ্যাডভাইস ও সেন্সরশিপের মাধ্যমে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। টিভি টকশোতে নানাভাবে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে গ্রেফতারের জন্য মামলা দেয়া হয়েছে। নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে টেলিফোনে হুমকি দেয়া হয়েছে। এনটিভির চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ও একুশে টিভি চেয়ারম্যান আবদুস সালামকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। বাংলাভিশনের জনপ্রিয় টকশো ফ্রন্টলাইন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমরা অবিলম্বে গণমাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ, গ্রেফতারকৃত সম্পাদক ও টিভি মালিকদের মুক্তি এবং বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। ”
গাজী বলেন, “চলমান সংকট নিয়ে দেশের মানুষই শুধু নয়, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বও উদ্বিগ্ন। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সবাই একবাক্যে দুই রাজনৈতিক পক্ষকে সংলাপে বসার আহবান জানিয়েছে। আমরা আবারও বলছি, গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনই দেশে শান্তি এনে দিতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এবং সম্ভাব্য আরও ভয়াবহ পরিণামের কথা ভেবে সরকারকে নির্বাচনের লক্ষ্যে সংলাপ অনুষ্ঠানের আহবান জানাচ্ছি। রাজনৈতিক সংকটকে অস্ত্র দিয়ে মোকাবেলা না করে রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। ”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রভিসি আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ড্যাব এর সহ-সভাপতি আবদুস সালাম ও গীতিকার গাজী মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।