কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির ব্যবহার বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়ছে, এবং বাংলাদেশও এই ধারা থেকে পিছিয়ে নেই। দেশের শোবিজ অঙ্গনেও এ প্রযুক্তির প্রভাব ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। বিজ্ঞাপনচিত্র, নাটক, সিনেমাসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজে নির্মাতারা এখন নিয়মিত এআই ব্যবহার করছেন। এক সময় যা ছিল কল্পনার মতো, এখন তা বাস্তবে কাজকে সহজতর ও দ্রুততর করে তুলছে।
নির্মাতারা মনে করছেন, এআই কোনো হুমকি নয় বরং সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। মেধাবী ও দক্ষদের জন্য এটি নতুন সুযোগ এনে দিচ্ছে, যদিও অদক্ষদের জন্য কিছুটা চাপ তৈরি করতে পারে।
নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল মনে করেন, এআই কোনো যাদুর কাঠি নয়, এটি একটি টুলমাত্র। দক্ষ ব্যক্তি কখনোই কর্মহীন হবেন না, বরং এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁদের কাজ আরও সহজ ও সৃজনশীল হবে। তিনি নিজেই দেশে প্রথম এআই ব্যবহার করে একটি পূর্ণাঙ্গ শর্টফিল্ম নির্মাণ করেছেন এবং নাটকের দৃশ্যেও এর ব্যবহার করেছেন। তাঁর মতে, যেমন থ্রিডি ভিজ্যুয়াল এক সময় নতুন ছিল এবং পরে তা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, তেমনি এআইও ধীরে ধীরে সবার কাছে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
‘ঢাকা অ্যাটাক’ নির্মাতা দীপঙ্কর দীপন মনে করেন, ভবিষ্যতের কাজগুলো হবে মানুষ ও এআইয়ের সম্মিলিত প্রয়াসে। তিনি বলেন, এআই শুধু ভিজ্যুয়াল তৈরির সীমায় নেই, এটি স্ক্রিপ্ট লেখা, নির্মাণ কৌশল, মার্কেটিং, এমনকি প্রজেক্ট বিক্রির কৌশলেও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তাঁর ভাষায়, যে এআই ব্যবহার শিখতে পারবে, সে এগিয়ে যাবে; আর যেসব নির্মাতা বা কর্মী তা পারবে না, তারা পিছিয়ে পড়বে। অদক্ষদের জন্য ঝুঁকি থাকলেও দক্ষদের জন্য এটি নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।
নির্মাতা রাকা নোশিন নাওয়ারও এআইকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তাঁর মতে, এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজের গতি বেড়েছে, যেসব কাজ এক সময় মাসখানেক লাগত, এখন তা কয়েক দিনের মধ্যেই শেষ করা যাচ্ছে। তবে এর কার্যকর ব্যবহার শিখতে হবে। তিনি স্ক্রিপ্ট লেখার সময়, গবেষণায় এবং প্রি-প্রোডাকশন কাজেও এআই ব্যবহার করছেন। তাঁর বিশ্বাস, এআই কর্মহীনতা তৈরি করবে না, বরং নতুন কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করবে। ক্যামেরার পেছনের কর্মীরা নতুন দক্ষতায় নিজেকে গড়ে তুললে, প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাঁরা আরও বেশি সফল হবেন।
নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকী জানান, তিনি তাঁর বিভিন্ন কাজে যেমন স্ক্রিপ্ট লেখা ও প্রজেক্ট প্রেজেন্টেশনে এআই ব্যবহার করছেন। যদিও এখনো ভিজ্যুয়াল দিক থেকে এআই ব্যবহার শুরু করেননি, তবে তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে এআই filmmaking-এ বড় ভূমিকা রাখবে। তাঁর ভাষায়, “প্রযুক্তি নতুন কিছু নয়, টাইপরাইটার বা কম্পিউটারও একসময় নতুন ছিল। আজ সেগুলো ছাড়া কাজ কল্পনাও করা যায় না। তেমনি এআইকেও শিখে এবং বুঝে কাজে লাগাতে হবে।”
সব মিলিয়ে নির্মাতাদের দৃষ্টিতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি বাংলাদেশের শোবিজের জন্য হুমকি নয়, বরং এটি একটি বড় সম্ভাবনা। দক্ষতা ও সৃজনশীলতাকে সঙ্গে নিয়ে যারা প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে, তারা এ প্রতিযোগিতামূলক জগতে এগিয়ে থাকবে। শোবিজে গুণগত মানের উন্নয়ন ও বৈশ্বিক বাজারে পা রাখার জন্য এআই হতে পারে একটি কার্যকর হাতিয়ার।