সোনার বাংলা বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান আইনমন্ত্রীর

SHARE

দেশের নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতে বিচারাধীন প্রায় ৩৭ লাখ মামলা থেকে নতুন বছরে পাঁচ-ছয় লাখ মামলা কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের। মামলা জট কমাতে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হবে।

আজ বুধবার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সহকারী জজদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের আনিসুল হক এ কথা বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এই লক্ষ সামনে রেখে বিচারিক আদালতে লোকবল বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৬ লাখ ৬০ হাজার।

আইনমন্ত্রী বলেন, এখানে ৩৬ লাখ ৬০ হাজার মামলার যে কথা বলা হচ্ছে সেটার সঙ্গে কিন্তু কিছুটা পার্থক্য আছে। এটা যাই হোক আমাদের এই বছর লক্ষ্য থাকবে এই মামলা জট থেকে অন্তুত পাঁচ থেকে চয় লাখ মামলা কমানো।

তিনি বলেন, আমরা মামলার চাপ কমানোর যে পরিকল্পনা নিয়েছি তা অবাস্তব নয়। আমরা চেষ্টা করবো, বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।

আইনমন্ত্রী যেসব ফৌজদারী মামলা আপসযোগ্য সেসব মামলা আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে বিচারকদের আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, এ প্রক্রিয়াটি আরও জোরদার করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিকল্পবিরোধ নিষ্পত্তি আরও জোরদার করা হবে। বিকল্পবিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়টি এখনও জনগণের কাছে তেমনভাবে পরিচিত নয়। সেই ক্ষেত্রে ফৌজদারী মামলা যেগুলো আপসযোগ্য, সেগুলোর বিষয়ে আদালত যেন বলে দেন কোর্টেও বাইওে মিমাংসা করতে।

এর আগে আইনমন্ত্রী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন সভার কাজের ধরণ আলাদা হলেও সবার আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন এবং সেটি হচ্ছে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করা। এই সোনার বাংলা বিনির্মাণে সকলকে এক লক্ষ্যে, এক প্রেরণায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা। এই আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচারকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। কেবল আইনের শাসন নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্র সুসংহতকরণ এবং দারিদ্র দূরীকরণেও বিচারকদের তথা কোয়ালিটি জুডিসিয়ারির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই জনগণকে কোয়ালিটি জুডিসিয়ারি উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার বিচার বিভাগকে সবধরণের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

প্রশিক্ষণার্থী বিচারকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, সমাজে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পেশাগতজীবনে অন্যের অনুসরণীয় হওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বিচার সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সততার ভিত্তিতে চারিত্রিক দৃঢ়তা ও স্বচ্ছতা হতে হবে কর্মজীবনের মূলমন্ত্র। বিন্দুমাত্র লোভ কিংবা অসততার কারণে বিচার বিভাগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে যাতে কোনো হতাশা বা বিরূপ ধারণার সৃষ্টি না হয় সেদিকে তাঁদের খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, আপনাদের বিচারক হয়ে ওঠার পেছনে এ দেশের গরিব-দুঃখি-মেহনতি মানুষের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ অবদান রয়েছে। তাঁদের কর্মক্ষেত্রই হল বিচারপ্রার্থী এসব মানুষের শেষ ভরসাস্থল। তাই জনগণের দ্রুত ও সহজে ন্যায়বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। নিছক গতানুগতিক বা দায়সারা ভাব পরিহার করে কর্মক্ষেত্রে সৃষ্টিশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাবেক বিচারপতি খন্দকার মুসা খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।