যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল নিউইয়র্ক শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ এবং পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগদানের পাশাপাশি নিজেকে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবেও পরিচয় দিচ্ছেন।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই গভীর রাতে ঢাকার গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে প্রকাশ্যে যুবলীগের ঢাকা মহানগরের (দক্ষিণ) সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যা মিশনে সরাসরি চঞ্চল জড়িত ছিল বলে মিল্কির পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই অভিযোগ করা হচ্ছে।
পরে পুলিশি তদন্তেও প্রমাণ হয় চঞ্চল এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত। তার নিজের গাড়ি নিয়েই হত্যাকারীরা হত্যা মিশনে অংশ নেয়। মিল্কি নিহত হওয়ার পরে দেশজুড়ে হই-চই পড়ে যায়। শুরু হয় হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান। ওই সময় নিজেদের গুলিতে আহত হন দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক এইচ এম জাহিদ সিদ্দিকি তারেক।
পরে তিনিও র্যাবের সঙ্গে কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হন। চঞ্চলকে খুঁজতে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু যুবলীগ মহানগর উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক চঞ্চল কৌশলে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু তিনি তার অনুসারীদের কাছে প্রচার করেন তিনি ব্যাংককে অবস্থান করছেন।
ঢাকার সব মিডিয়ায় প্রচার ও প্রকাশ করা হয় চঞ্চল থাইল্যান্ডের ব্যাংককে রয়েছেন। কিন্তু পেশাদার এই খুনি যুবলীগ নেতাকে খুন করে চলে আসেন যুক্তরাষ্টে।
গত বছরের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে আসেন ওই একই সময়ে চঞ্চলও আসেন নিউইয়র্কে। তিনি অন্য মন্ত্রী ও নেতাদের মাধ্যমে চেষ্টা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। তিনি দেখা করতে পেরেছিলেন কিনা জানা যায়নি।
তবে একাধিক ব্যক্তিকে তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বহরের সঙ্গেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। সরকারের একাধিক মন্ত্রীর সহযোগিতাতেই নাকি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। মিল্কির বড় ভাই র্যাবের একজন বড় কর্তা। মামলাটি মিল্কির ভাইয়ের সারসরি তত্ত্বাবধানে এগুচ্ছে বলেও জানা যায়। আর সে কারণেই চঞ্চলের জন্য এখন আর কেউ সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছে না। অনেক চেষ্টা করেও চঞ্চল কারো সহযোগিতার আশ্বাস না পেয়ে সব আশা ছেড়ে দিয়ে নিউইয়র্কে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এখন জ্যামাইকা এলাকায় একটি ভাড়া বাসা নিয়ে থাকছেন।
তার এলাকার একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তিনি এখন নিউইয়র্কের এক মহিলাকে বিয়ে করে স্থায়ী হতে চাচ্ছেন। যদিও দেশে তার পরিবার রয়েছে। দ্রুত কাগজ পাওয়ার জন্যই নাকি তিনি এই বিয়ে করছেন। এ বিষয়ে জানার জন্য অনেক চেষ্টা করেও চঞ্চলকে পাওয়া যায়নি।
এই মামলায় চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক এইচ এম জাহিদ সিদ্দিকী ওরফে তারেক ফোকাস, নিহত মিল্কির গাড়িচালক মারুফ রেজা সাগরের স্ত্রী ফাহিমা ইসলাম লোপা, জাহাঙ্গির মঙ্গল, শহিদুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, সোহেল মামুন, চুন্নু মিয়া, আরিফ, ইব্রাহীম খলিল, রফিকুল ইসলাম ও শরীফ উদ্দীন চৌধুরী।
এ ছাড়া মাহবুবুল হক হিরক, আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সোহেল মাহমুদ, জাহাঙ্গীর ম-ল, ফাহিমা ইসলাম লোপা আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। মিল্কির গাড়িচালক মারুফ রেজা স্বাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।