‘অপারেশন ঈগল হান্ট’ সমাপ্ত, নিহত চারজনই আত্মঘাতি

SHARE

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা :   চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুরে শিবনগর গ্রামের ‘জঙ্গি আস্তানায়’ পরিচালিত অভিযানে নব্য জেএমবি নেতা আবুসহ চারজন নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’ নামের এই অভিযান সমাপ্তির ঘোষণা দিয়ে এ তথ্য দেন পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন।

এক ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, নিহতদের মধ্যে একজন আবু বলে জানা গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে বাকিদের নাম জানা যায়নি।

এর আগে বিকালে ওই বাড়ি থেকে আহত অবস্থায় আবুর স্ত্রী সুমাইয়া ও চার বছরের কন্যা সাহিদাকে উদ্ধার করা হয়।

তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশের কর্ডন করে রাখা এলাকায় ঢুকে পড়ায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার রাতে সাময়িক স্থগিত করার পর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অভিযান শুরু করে পুলিশের বিশেষায়িত টিম সোয়াত ও এপিবিএন সদস্যরা। এরপর থেকেই দিনভর থেমে থেমে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। দফায় দাফায় গুলির শব্দে আশে পাশের এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

দুপুর ১২টা ও ১টা দিকে বিকট শব্দে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এসময় বাড়ি উপরে আগুনের ধোঁয়া দেখা যায়।

পুলিশের পক্ষ থেকে হ্যান্ডমাইকের মাধ্যমে আত্মসমর্পণের জন্য জঙ্গিদের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এতে তারা কেউ সাড়া দেয়নি।

বিকাল ৫টার দিকে ব্যাপক গোলাগুলির মধ্যে ঘিরে রাখা ওই বাড়ি থেকে জেএমবি নেতা আবুর স্ত্রী সুমাইয়া ও চার বছরের কন্যা সাহিদাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর আগে সকালে ঘটনাস্থলে আসে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ও পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সও রাখা হয়। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে পুলিশের কর্ডন করে রাখা এলাকায় ঢুকে পড়ায় বিকাল ৪টার দিকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার নাম পরিচয় জানা যায়নি।

সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলের পাশে একটি আমবাগানে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি খুরশীদ হোসেন ‘অপারেশন ঈগল হান্টের’ সমাপ্তি ঘোষণা করে বলেন, বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও জঙ্গি নেতা আবু আত্মসমর্পণ করেনি; বরং বাড়ির ভেতর থেকে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। কাজেই বাধ্য হয়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গুলি করতে হয়েছে।

ওই বাড়ি থেকে জঙ্গি নেতা আবুসহ চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে নিহত অন্য তিনজনের পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।

নিহতরা নিজেদের গ্রেনেডের বিস্ফোরণে মারা গেছেন বলে দাবি করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

তবে জঙ্গি আবুর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সুমাইয়া ও কন্যা সাদিয়াকে জীবিত উদ্ধার করার ঘটনায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন এটা পুলিশের জন্য একটি সফলতা।

তিনি আরও বলেন, পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ও সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট এখন ওই বাড়িতে পরবর্তী কার্যক্রম চালাবে।

এসময় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম, সোয়াতের উপ-কমিশনার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শিবগনগর ত্রিমোহনী এলাকার ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এসময় ওই বাড়ি থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হলে বিকালে অভিযানে যোগ দেয় সোয়াত সদস্যরা।

ওইদিন সন্ধ্যা পৌনে ৭টা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের ব্যাপক গুলিবিনিময় হয়। একপর্যায়ে কৌশলগত কারণ দেখিয়ে রাত ৯টার দিকে অভিযান সাময়িক বন্ধের ঘোষণা দেন সোয়াত কর্মকর্তা প্রলয় কুমার জোয়ার্দার।

সেসময় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে আবারো অভিযান শুরু করার কথা জানিয়েছিলেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

এদিকে গত দুইদিন ধরে ওই বাড়িটি ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনাস্থলের আশপাশের বাড়িগুলো থেকে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

পুলিশের জানায়, ওই জঙ্গি আস্তানায় নব্য জেএমবি নেতা আবু তার স্ত্রী সুমাইয়া ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস বাস করতেন।