সুনামগঞ্জের হাওরের কান্না কিশোরগঞ্জে গিয়ে শেষ : রাষ্ট্রপতি

SHARE

২৪আওয়ার রিপোর্ট  :  রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বলেছেন, সুনামগঞ্জের হাওরে কান্না শুরু হয় আর কিশোরগঞ্জে গিয়ে শেষ। যখন শুনলাম সুনামগঞ্জের হাওর ডুবল, তখন ভাবলাম এখন কিশোরগঞ্জের ডুববে।
রষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে দুর্যোগে আমি সুনামগঞ্জে এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দেশ স্বাধীন করতে সুনামগঞ্জ এলাকায় যুদ্ধ করেছি। এভাবে এবার ফসলহারা কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। তবে যারা ফসল হারিয়েছেন জানিনা তাদের জন্য কতটুকু করতে পারবো। আমার প্রচেষ্টা একেবারে বিফলে যাবে না।
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, আগামী ২ মে জাতীয় সংসদের অধিবেশন ডাকা হয়েছে। হাওর এলাকার এমপিদের সমস্বরে হাওর এলাকার দাবি জোড়ালোভাবে তুলতে হবে।
সোমবার দিনগত রাত ৯ টা ৫৫ মিনিটে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি তার ৫০ মিনিটের বক্তব্যে বলেন, আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য মজুদ রয়েছে। আপনার হওরের মানুষ না খেয়ে থাকবে না। কৃষকের ঋণ মওকুফের ব্যাপারেও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব। আপনারা আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি সরকারের কেউ না। আমি বাংলাদেশর রাষ্ট্রপতি। আমি নিরপেক্ষ। আমি কোনো দলের মন্ত্রী নয়। কারণ রাষ্ট্রপতি পদ হচ্ছে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ পদ।
তিনি বলেন, আমি কখনো সরকার দলে ছিলাম না। ২১ বছর বিরোধেী দলে ছিলাম, একবার ডেপুটি স্পিকার ছিলাম সরকারে নয়। নিরপেক্ষ ছিলাম। আবার স্পিকার ছিলাম। তাও আবার নিরপেক্ষ। এবার রাষ্ট্রপতি তাও আবার একবারে মহানিরপেক্ষ।
তিনি আরো বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকাকে কয়েকটি ইকোনমিক জোনে ভাগ করা হয়েছে। হওর এলাকায় কলকারখানা করে ইকোনমিক জোনের আওতায় আনার জন্য সরকারকে বলব।
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, আমার প্রযুক্তিতে সাবমারজেবল সড়ক করা হয়েছে। তাও প্রথমে পরীক্ষামূলক চালু করা হয়। যখন দেখা গেল টেকসই হয়েছে তখন থেকে হাওর এলাকায় সাবমারজেবল সড়ক নির্মিাণ শুরু হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ আরো বলেন, সুনামগঞ্জে হাওরের ফসলের অনেক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। আমি সব সময় হাওরের খোঁজ খবর নেই। কারণ আমি হাওরের মানুষ। আমার জেলা কিশোরগঞ্জও হাওর বেষ্টিত এলাকা।
তিনি বলেন, আমি কৃষকের ছেলে তাই সুনামগঞ্জের হাওরের বর্তমান কি অবস্থা তা আমি বুঝতে পারি। আপনারা যে দাবি করেছেন ওএমএস কার্যক্রম আগামী চৈত্র মাস পর্যন্ত চালু রাখার জন্য। সে জন্য আমি সরকারকে বলব। ইতিমধ্যেই আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি।
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, আপনারা যে ভাবে হাওর রক্ষা বাঁধের দুর্নীতির কথা বলেছেন সে ভাবে যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন তাহলে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব। আশা করি আপনারা এই দুর্যোগ দ্রুত কাটিয়ে উঠবেন।
জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-২ আসনের এমপি ড. জয়া সেনগুপ্তা, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি  ও রাষ্ট্রপতি পুত্র রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার সংরক্ষিত আসনের এমপি অ্যাডভোকেট শামছুন নাহার বেগম শাহানা।
অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার নাজমুনারা খানুম, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসান, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র আয়ুব বখত জগলুল, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আলী বীর প্রতীক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম, সাংবাদিক কামরুজ্জামান চৌধুরী শাফি, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে, মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ, মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আলী আমজাদ, অ্যাডভোকেট বজলুল মজিস চৌধুরী খসরু, শাল্লা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অবনী মোহন দাস, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামছুল আবেদীন, সাংবাদিক বিজন সেন রায়, পঙ্কজ কান্তি দে, আল হেলাল প্রমুখ।
এর আগে দুপুর দেড় টায় ফসলহারা হাওরপাড়ের কৃষকদের দুঃখ ও দুর্দশা স্বচক্ষে দেখতে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থেকে হেলিকপ্টার যোগে লো-ফ্লাইংয়ে বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করে দুপুর সোয়া ২ টায় সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনস্ হেলিপ্যাডে তাকে বহনকারী হেলিক্টার অবতরণ করে।
সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি সুনামগঞ্জ ঐতিহ্যবাহী যাদুঘর পরিদর্শন করেন। সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউসে রাত্রীযাপন করেন।