কলিন মানরো মাত্র তিন বল উইকেটে থাকলেন। তাতেও আগের ম্যাচের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডের ছবি খুব একটা বদলাল না। মানরোর সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ড করেছিল ১৯৫ রান, আর আজ কারও সেঞ্চুরি ছাড়াই ১৯৪। আগের ম্যাচে ৪৭ রানে হারের পর আজ বাংলাদেশের হার ২৭ রানে—‘উন্নতি’র লক্ষণ আছে পরাজয়ের ব্যবধানেও!
এই সফরে এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচের সব কটি হেরেছে বাংলাদেশ। রঙিন পোশাকের সব খেলাতেই হোয়াইট ওয়াশ। এবার সাদা পোশাকের খেলা।
আগের ম্যাচের সঙ্গে এ ম্যাচের মিল অবশ্য আরও আগে থেকেই। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও টসে জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। আজও করলেন সেটাই এবং যথারীতি রানের পাহাড়ের নিচে পিষ্ট বাংলাদেশ।
মাথার ওপর রানের বোঝা চেপে বসার পর যা হওয়ার তাই হয়েছে বাংলাদেশের ইনিংসে। জেতার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি কখনোই। হতাশার মধ্যে আশার আলো কেবল সৌম্য সরকার। আগের ম্যাচে ৩৯ রানের ইনিংস দিয়ে রানে ফিরেছেন, আজও সে ধারাবাহিকতা ধরে রেখে করেছেন ২৮ বলে ৪২। সাকিব করেছেন ৩৪ বলে ৪১। তবে ১৯৪ রান তাড়া করে জিততে যে ব্যাটিংটা দরকার ছিল, সেটা করা সম্ভব হয়নি কারও পক্ষেই। অলআউট হয়নি, এটাই যদি কোনো ‘সান্ত্বনা’ হয়! ২০ ওভার শেষে বাংলাদেশ থেমে গেছে ১৬৭ রানে, হারিয়েছে ৬ উইকেট।
নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে আজ মানরোর জায়গাটা নিয়ে নিয়েছিলেন কোরি অ্যান্ডারসন। সেঞ্চুরি করেননি, তবে বাংলাদেশ আর বে ওভালকে মনে রাখার মতো ব্যাটিং করে গেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। মাত্র ৪১ বলে টি-টোয়েন্টিতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৯৪ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত। ৪১ রানে ৩ উইকেট পড়ার পরও তাই নিউজিল্যান্ডের ইনিংস ২০০ ছুঁই ছুঁই।
সাগর থেকে উড়ে আসা মাতাল হাওয়া বে ওভালকে স্থির হতে দেয় না কখনো। তাঁবু টানিয়ে বানানো অস্থায়ী প্রেসবক্স আর হসপিটালিটি বক্সে সারাক্ষণই হাওয়ার লুটোপুটি। এর মধ্যেই মাঠের ভেতর ঝড় তুললেন অ্যান্ডারসন। তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টম ব্রুসের বিদায়ের পর উইকেটে এসে শুরুটা একটু ধীরেই করেছিলেন। কিন্তু পরে এমনই ঝড় তুললেন যে প্রথম ১০ ওভারে তিন উইকেটে মাত্র ৫৫ রান করার ক্ষতিটা পুষিয়ে দিয়েছেন শেষ ১০ ওভারে। ১৩৯ রান করেছে নিউজিল্যান্ড এই সময়ে। এর মধ্যে অ্যান্ডারসনেরই ৮৮।
১১তম বলে মোসাদ্দেক হোসেনকে মিড অফ দিয়ে চার মেরে শুরু অ্যান্ডারসন ঝড়ের। পরের ওভারেই মাশরাফি বিন মুর্তজাকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা। ইমরুল কায়েস ক্যাচের জন্য উল্টো দিকে দৌড়ে হুড়মুড়িয়ে পড়লেন বাউন্ডারিতে থাকা বিজ্ঞাপন বোর্ডের ওপারে। চোট খুব গুরুতর না হলেও হাঁটুতে পাওয়া ব্যথাটা মাঠ ছাড়তে বাধ্য করল তাকে। ব্যাটিংয়েও হতে পারেননি তামিম ইকবালের ওপেনিং সঙ্গী।
১০ ছক্কার মধ্যে অ্যান্ডারসন মাশরাফির বলেই মেরেছেন আরও দুটি। সৌম্য সরকার তো এক ওভারে পর পর তিন ছক্কা খেয়ে আর বলই পেলেন না। তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন—কাকে মারেননি অ্যান্ডারসন! ব্যতিক্রম শুধু সাকিব আল হাসান। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়েছেন এবং সেটা অ্যান্ডারসনের হাতে কোনো চার-ছক্কা খাওয়া ছাড়া। মাশরাফিকে তো অ্যান্ডারসন শেষ পর্যন্ত মাঠের বাইরেই পাঠিয়ে দিলেন।
নিজের চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলটা ফুলটস করেছিলেন মাশরাফি। অ্যান্ডারসনের ব্যাট হয়ে বলটা তীব্র গতিতে ফিরে আসতে লাগলে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মাশরাফি। বলের আঘাতে ব্যথা পেয়ে ওভার অসমাপ্ত রেখে মাঠ ছাড়েন মাশরাফিও। অবশ্য যতক্ষণ মাঠে ছিলেন, তাতেই উইলিয়ামসনকে দুবার আউটের সুযোগ তৈরি করেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের ক্যাচ মিসে কিউই অধিনায়ক বেঁচে গেছেন দুবারই। পরে ৬০ রান করে বোল্ড হয়েছেন রুবেল হোসেনের বলে। ততক্ষণে নিউজিল্যান্ডের রান ১৬৫। চতুর্থ উইকেটে ১২৪ রানের জুটি গড়ে অ্যান্ডারসনকে সবচেয়ে বড় সমর্থনটা দিয়ে গেছেন উইলিয়ামসনই।
ব্যাটিংয়ে এমন কিছুই করতে পারল না বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড ৩ উইকেট পড়ার পর হাল ধরেছে, বাংলাদেশ যেন উল্টো—৩ উইকেট পড়ার পর পথ হারিয়েছে। একটা সময় ৮ ওভারে ৮০ রান ছিল, ১ উইকেটে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারেই শুধু তামিমের উইকেট হারিয়ে এসেছিল ৬৯ রান। কিন্তু এরপর নিউজিল্যান্ড স্লো বোলারদের নিয়ে এল, বাংলাদেশের রানের গতিও হয়ে গেল ধীর। ষষ্ঠ ওভারের পঞ্চম বল থেকে শুরু করে ১৩তম ওভার পর্যন্ত ৪৩টি বলে কোনো বাউন্ডারিই আসেনি। উইকেটও পড়েছে এ সময়ে সৌম্য ও সাব্বিরেরটি।
সেখানে পথ হারানো শুরু। শেষ দিকে সাকিবের ৩৪ বলে ৪১ রানের ইনিংসও যা আর ট্র্যাকে ফেরাতে পারেনি। আরও একবার ভালো শুরু করেও হেরেছে বাংলাদেশ।