ব্রেন্ডা মেয়ার্স পাওয়েল। খুব ছোট বয়সে পেটের দায়ে, সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে শরীর বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন, ‘ওরা আমার শরীরটাকে টয়লেটের মতো ব্যবহার করেছে।’ আজ তিনি সেই সমস্ত মেয়েদের কাছে উদাহরণ, যাঁরা এই পথে নামতে কোনো না কোনো ভাবে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই সব হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতে ব্রেন্ডা যে কাজ করছেন তার জন্য কোনো প্রশংসা, কোনো বিশেষণ যথেষ্ট নয়।
জীবনের ২৫টা বছরের যে ভয়ানক দগদগে স্মৃতি তা তিনি অকপটে জানিয়েছেন। আর দেখিয়েছেন, বারবার ভেঙে ছড়িয়ে পড়ার পরেও ফের এক বার উঠে দাঁড়ানো যায়। তিনি বলেন, ‘১৯৬০-এর দশক, আমি বড় হয়ে উঠছি তখন। আমার য়খন ৬ বছর বয়স, তখন মা মারা যান। মায়ের তখন বয়স ছিল ১৬। আমার নানী আমায় মানুষ করেন। তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তবে তার সব থেকে বড় সমস্যা ছিল মদ্যপানের। একবার নেশা করতে বসলে জ্ঞান থাকা পর্যন্ত মদ্যপান করেতেন। আর সেই সুযোগ নিত তার সঙ্গে মদ্যপান করতে আসা পুরুষরা। প্রথমবার যখন আমার যৌন হেনস্থা হয়, তখন আমার বয়স ৪-৫ হবে। এর পর থেকে তা রুটিনে পরিণত হয়। রোজ রোজ হেনস্থার শিকার হতে থাকি। ১৪ বছর বয়সেই দু’টি সন্তানের জন্ম দিতে হয়। সে সময় আমাদের সংসারের অবস্থা খুব খারাপ। দিদিমা বলেন, খাবার জোগাড় করতে কিছু করতে হবে। ছোটবেলায় দেখতাম, কয়েক জন মহিলা রাস্তার মোড়ে খুব রঙচঙে পোশাক পড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। দিদাকে জিজ্ঞাস করেছিলাম, ওরা কি করছে। দিদা বলেছিলেন, জামা-কাপড় খোলার জন্য পুরুষরা ওঁদের টাকা দেয়। সেই কথাটা সারাজীবন আমার মনে গেঁথে থাকবে। শেষ পর্যন্ত রাস্তায় স্বল্প পোশাকে গিয়ে দাঁড়াই আমি। ১৪ বছর বয়সটা এমন কিছু নয়। তাই নিজেকে খানিকটা বয়সে বড় দেখাতে সস্তা কমলা রঙের লিপস্টিক লাগিয়েছিলাম। সেই প্রথম রাতেই ৪ জন পুরুষ পাগলের মতো ভোগ করেন। পরের দিন ৪০০ ডলার নিয়ে বাড়ি ফিরি। বেশিরভাগটা নানীর হাতেই দিয়েছিলাম। তিনি একবারও জিজ্ঞাস করেননি, টাকা এলো কোথা থেকে।’
সেই থেকে শুরু। তিন-চার মাস বাদে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়েব্রেন্ডাকে অপহরণ করে কয়েকজন দুষ্কৃতী। এর পর থেকে শুরু হয় অত্যাচার। শুরু শারীরিক নয়, মানসিকও। ব্রেন্ডা বলেন, ‘দিনে ৫-৬ জন পুরুষ আমার শরীরকে যেমন ইচ্ছে ব্যবহার করত। নিজেকে মাঝে মাঝে টয়লেট মনে হতো। ওরা মারা শরীরটাকে টয়লেটের মতোই ব্যবহার করত।’ একবার পালানোরও চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে আরও অত্যাচিরত হন। এর মাঝে ২৫ বছর কেটে গিয়েছে। এক দিন তার এক ‘খদ্দের’ মাঝ রাস্তায় তাকে নামিয়ে দরজা বন্ধ করে গাড়ি চালিয়ে দেন। কিন্তু দরজার মাঝে তার কাপড়ের একটা অংশ আটকে যায়। চিত্কাজর করে বারবার অনুনয় করেও গাড়ি থামানো যায়নি। প্রায় কিলোমিটার খানেক ব্রেন্ডাকে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার পরকাপড় ছিঁড়ে যায়। হাসপাতালে গিয়েও জোটে চূড়ান্ত অবহেলা।
সেখানেই এক মহিলা ডাক্তার তাকে একটি হোমের খোঁজ দেন। সঙ্গে একটি বাসের টিকিটও জোগাড় করে দেন। জেনেসিস হাউজ। যেটা চালাতেন এক বৃটিশ মহিলা, এডইউনা গেটলে। এই মহিলাই ব্রেন্ডার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেন। অন্ধকার থেকে আলোর পথে হাঁটা শুরু সেখান থেকেই। এর পর ২০০৮-এ স্টিফ্যানি ড্যানিয়েল্স উইলসন-এর সঙ্গে মিলে একটি ফাউন্ডেশন গড়েন। নাম দেন ড্রিমক্যাচার ফাউন্ডেশন। আজ এখান থেকে অনেক মেয়ে জীবনের মূল স্রোতে ফিরেছেন। ব্রেন্ডার দুই মেয়ের এক জন ডাক্তার হয়েছেন। অন্য জন আইনজীবী হয়ে এই সব মেয়েদের জন্য আদালতে মামলা লড়েন। ব্রেন্ডা জানাচ্ছেন, ‘বারবার আত্মবিশ্বাস ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরও আমি জীবনকে নতুন রূপ দিয়েছি। আপনাকে অনেক বলতে পারে যে, আপনার কিছু হবে না, আপনি দেহব্যবসা ছাড়া আর কিছু করতে পারবেন না। কিন্তু বিশ্বাস করুন এর পরেও জীবন থাকে। ছোট্টখাটো জীবন নয়। অনেকটা জীবনই বাকি থাকে।’