রাতভর গাড়ি চালিয়ে সালাহ উদ্দিনকে ফেলে যায় : মানস চৌধুরী

SHARE

manos cwবিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ‘রাতভর গাড়ি চালিয়ে’ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে ফেলে রেখে যাওয়া হয় বলে মনে করেন শিলং টাইমসের সম্পাদক মানস চৌধুরী।

নিখোঁজের ৬৩ দিন পর খোঁজ পাওয়া সালাহ উদ্দিন আহমেদের শিলং পুলিশের হাতে আটক হওয়ার খবর প্রথম ছেপেছিল শিলং টাইমস। আজ বুধবার এনটিভির সাথে টেলিফোনে মেঘালয়ের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও দুইবারের বিধায়ক মানস চৌধুরী এ কথা বলেন। এ সময় শিলং টাইমস পত্রিকার সম্পাদক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘পুলিশ জানিয়েছে, ওনাকে (সালাহ উদ্দিন আহমেদ) পাওয়া গেছে অজানা-অপরিচিত জায়গার মধ্যে। উনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং জিজ্ঞাসাবাদ করায় উনি কোনো উত্তর দিতে পারছেন না। তারপর লোকদের সন্দেহ হওয়ায় লোকেরা পুলিশকে ডেকে নিয়ে আসে। পুলিশ এসে ওনাকে নিয়ে যায় থানায়।’

মানস চৌধুরী আরো বলেন, ‘এরপর পুলিশ জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছে? উনি বললেন, আমি জানি না। আমাকে গাড়িতে করে এখানে চোখ বাঁধা অবস্থায় এনে ফেলে গেছে। পুলিশ বলল, আপনি কোথা থেকে আসছেন? উনি বললেন, আমাকে তো দুই মাস ধরে আটক করে রেখেছিল, বন্দী করে রেখেছিল। আমাকে কে বা কারা বন্দী করেছিল, আমি জানি না। আমি বন্দী অবস্থায় ছিলাম, আমাকে গাড়িতে করে চোখ বেঁধে এখানে নিয়ে এসে ফেলে গেছে। এটুকুই উনি বক্তব্য রেখেছেন।’

এরপরই শিলং টাইমস-এর সম্পাদক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা যোগ করেন, ‘যেটা বুঝতে পারলাম যে, রাতভর গাড়ি চালিয়ে ওনাকে ফেলে গেছে ওইখানে।’

বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশের ঘটনায় সালাহ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও এদিন স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এনটিভিকে জানান শিলং টাইমস পত্রিকার সম্পাদক মানস চৌধুরী।

এরই মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে জানিয়ে মানস বলেন, ‘আমার মনে হয়, এটা অনেক দিন লাগবে। চট করে উনি ছাড়া পাবেন না। ফ্যামিলি মেম্বার যেতে পারে, গিয়ে দেখা করতে পারে, সেটা অলরাইট। কিন্তু ছাড়িয়ে আনতে পারবে না এখন।’

গত ১০ মার্চ থেকে ‘নিখোঁজ’ ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তাঁর পরিবার ও দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।

তবে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আটক করা হয়নি বলে বারবার দাবি করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান চেয়ে গত ১১ মার্চ রাতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গুলশান ও উত্তরা পশ্চিম থানায় যান তাঁর স্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ। তবে কোনো থানাই তাঁর জিডি গ্রহণ করেনি। পরে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি দেন তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।

গত ১২ মার্চ হাসিনা আহমেদের করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে কেন খুঁজে বের করা হবে না এবং রোববার তাঁকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। গত ২০ এপ্রিল হাইকোর্ট আগামী ছয় মাস সালাহ উদ্দিন আহমেদের খোঁজ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন।

এর মধ্যেই গত সোমবার শিলংয়ে আটক হন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরপরই ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের দায়ে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা করে পুলিশ।

ভারতের পাসপোর্ট আইন ১৯৫০-এর ৩ ও ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, দেশটিতে অবৈধভাবে কোনোরকম কাগজপত্র ছাড়া প্রবেশ বা প্রবেশের চেষ্টা করলে তিন মাস বা তার বেশি কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড পেতে পারেন।

এ ছাড়া ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ ধারা অনুযায়ী, অন্য কোনো দেশের নাগরিক যদি অনুমোদিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ভারতে অবস্থান করেন, তাহলে তাঁর পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে।

সূত্র: এনটিভি অনলাইন