দস্তানা পরে তখন সবে হাত দিয়েছিলেন ছুরি-কাঁচিতে। হঠাৎ দুলতে শুরু করে অপারেশন থিয়েটার। কম্পন টের পেতেই মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে যায় হাসপাতাল। বছর তিরিশের চিকিৎসক যুবরাজ অগ্রবাল কিন্তু পালাতে পারেননি। কারণ, অপরাশেন টেবিলে তখনও শুয়ে বছর তেইশের এক তরুণী। এপ্রিলের ভূমিকম্পে জখম হয়েছে তার ডান-পা। অস্ত্রোপচার না করলে প্রাণে বাঁচানো যেত না। তাই প্রবল কম্পনের মধ্যে অস্ত্রোপচার সেরেই গত কাল হাসপাতাল ছাড়েন অগ্রবাল।
সূত্রের খবর, সফল অস্ত্রোপচার শেষে সুস্থ এবং নিরাপদেই আছেন সেই তরুণী।
নেপালে মৃতের সংখ্যা আজ বেড়ে হয়েছে ৭৯। তবে বুধবার নতুন করে কোনো ভূকম্প হয়নি। অবশ্য সারা দিনে অন্তত তেরোটি ‘আফটার-শক’ হয়েছে দেশে। এবং প্রতিবারই ভয়ে কেঁপেছেন যুবরাজ। সংবাদমাধ্যমকে বললেন, ‘‘প্রাণের ভয়ে আমিও পালাতে চেয়েছিলাম। শুধু ওই জখম মেয়েটির কথা ভেবেই পারিনি।’’
মেয়েটি সিন্ধুপালচকের বাসিন্দা। এপ্রিলের ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই মঙ্গলবারের ভূকম্প এসে ফের নাড়িয়ে দিয়ে গেছে তার গ্রামকে। মেয়েটির বাবা-মা গত সতেরো দিন ধরেই তাবু খাটিয়ে রাস্তায়। সেবার রক্ষা পেলেও, মঙ্গলবারের ভূকম্পের পর এখনও তাদের খোঁজ মেলেনি।
প্রশাসনের অনুমান, মঙ্গলবারের ভূমিকম্পে সিন্ধুপালচকের পর সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কাঠমান্ডুর উত্তর-পূর্বে ডোলাখা জেলায়। মৃতদের অধিকাংশই ডোলাখা জেলার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে নেপাল পুলিশ। আহতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ২ হাজার ছুঁয়েছে। ফের ভিড় জমছে হাসপাতালে। আর ক্রমশ বেড়েই চলেছে রাস্তায়-রাস্তায় নীল-লাল-হলুদ তাবুর সংখ্যা। ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় বাড়ি ফিরতে রাজি নন কেউ। ভূকম্প পরবর্তী দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশাসনও তাই অতিরিক্ত সতর্ক।
২৫ এপ্রিল প্রথম ভূকম্পের পর থেকে এখন পর্যন্ত নেপালে অন্তত ২০২টি ভূকম্প-পরবর্তী কম্পন হয়েছে বলে আজ জানিয়েছে নেপালের আবহাওয়া মন্ত্রক। আশঙ্কা, এই জাতীয় কম্পন জারি থাকবে আগামী বেশ কয়েক দিন অথবা মাস।
মঙ্গলবারের ভূমিকম্পেও দেশ জুড়ে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ভেঙেছে। ধসের কবলে পড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে চীন-নেপাল সড়ক। প্রশাসন সূত্রের খবর, রাস্তার উপর ৪০ হাজার কিউবিক মিটারের ধ্বংসাবশেষ জমেছে। দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ অবিচ্ছিন্ন রাখতে বুধবার দিনভর চলেছে রাস্তা সাফাইয়ের কাজ।
জোরকদমে চলছে উদ্ধারকাজও। দিন কয়েক আগেই সমস্ত বিদেশি উদ্ধারকারী দলকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয় নেপাল। মঙ্গলবারের ভূকম্প সেই অবস্থান বদলেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ডোলাখা জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত এলাকায় লোক পাঠানোটাই সব চেয়ে সমস্যার। তাই যত বেশি হেলিকপ্টার জোটে, ততই ভালো।’’ এরই মধ্যে আবার নেপালে মার্কিন নৌসেনার উদ্ধারকারী কপ্টার নিখোঁজ হয়েছে বলে আজ জানিয়েছে ওয়াশিংটন। নিখোঁজ কপ্টারটির সন্ধানে আজ দিনভর প্রায় শ’চারেক নেপালি সেনাকে ব্যস্ত দেখা গিয়েছে। এ ভাবে কপ্টার খুঁজতে গিয়ে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে দেরি হচ্ছে বলে উষ্মা প্রকাশ করেন নেপাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লক্ষ্মীপ্রসাদ ধকল।
ত্রাণ এবং উদ্ধারকাজ নিয়ে ফের এক দফা ক্ষোভ তৈরির আশঙ্কাও করছে প্রশাসন। তবে এখনও বিদেশি সাহায্য চাওয়া নিয়ে দ্বিধায় কাঠমান্ডু।