ইতিহাদের সামনে ডি ব্রুইনার ভাস্কর্য বসাবে ম্যানসিটি

SHARE

কেভিন ডি ব্রুইনা ম্যানচেস্টারে এসেছিলেন রেকর্ড গড়ে। ২০১৫ সালে সিটজেনরা ৭৫ মিলিয়ন ইউরোয় তাকে দলে ভেড়ায়, যা সে সময় ক্লাবটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে খেলোয়াড় কেনার রেকর্ড। ব্রিটিশ ফুটবলে সে সময় শুধু অ্যানহেল ডি মারিয়াকেই এর চেয়ে বেশি দামে দলে ভিড়িয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এতো দাম দিয়ে সিটিজেনরা কেমন খেলোয়াড় কিনেছে তা নিয়ে সমর্থকদের শঙ্কা ছিল সে সময়। কিন্তু গতকাল ডি ব্রুইনা যখন শেষবারের মতো ইতিহাদ সমর্থকদের হাত নেড়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে এলেন, সব শঙ্কার জবাব ততদিনে পেয়ে গেছেন তারা। ম্যানচেস্টার সিটি তো বটেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসেই যে জায়গা করে নিয়েছেন এই বেলজিয়ান মিডফিল্ডার।

গতকাল মঙ্গলবার (২০ মে) ইতিহাদ স্টেডিয়ামে বোর্নমাউথকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। এটিই ঘরের মাঠে এবারের মৌসুমে ম্যানসিটির শেষ ম্যাচ ছিল। এই মৌসুম শেষে ইতিহাদ ছাড়বেন দলটির মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনা। সে হিসেবে ঘরের মাঠে এটিই ছিল তার শেষ ম্যাচ।

এদিন ৬৯ মিনিটে ডি ব্রুইনা যখন মাঠ ছাড়েন তখন ইতিহাদের নীল সমুদ্র থেকে মুহুর্মুহু করতালির আওয়াজ ভেসে আসছিল। অধিনায়কও শেষবারের মতো সমর্থকদের করতালির জবাবে হাত নাড়তে নাড়তে মাঠ ছাড়েন। সতীর্থরাও একে একে এগিয়ে এসে তাকে বিদায় জানাতে থাকেন। ডাগআউটে দাঁড়িয়ে সিটিজেনদের কোচ পেপ গার্দিওলাও দলের সেরা তারকার জন্য হাততালি দিচ্ছিলেন। মাঠ ছেড়ে ডাগআউটের দিকে এসে ডি ব্রুইনা জড়িয়ে ধরেন তাকে। স্প্যানিশ কোচের চোখ ততক্ষণে অশ্রুবিন্দুতে চকচক করছে। গার্দিওলা ডি ব্রুইনার বিদায়ের দিনটিকে পরে সংবাদ সম্মেলনে আখ্যা দিয়েছেন কষ্টের দিন হিসেবে।

২০১৫ থেকে ২০২৫; মাঝের এক দশক প্রিমিয়ার লিগে রাজত্ব করেছেন ডি ব্রুইনা। এক দশকের শেষ আট বছরে গার্দিওলার সঙ্গে জুটি বেঁধে ছয়বার প্রিমিয়ার লিগ জিতিয়েছেন ম্যানসিটিকে। এর মধ্যে চারটিই আবার টানা জেতা। অধরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাও ধরা দিয়েছে। এছাড়া দুটি এফএ কাপ ও পাঁচটি লিগ কাপ তো আছেই।

এই পুরোটা সময় ম্যানসিটির খেলার ‘নিউক্লিয়াস’ ছিলেন ডি ব্রুইনা। নান্দনিকতা ও কার্যকরিতায় প্রিমিয়ার লিগে তিনি অদ্বিতীয়। এই ১০ বছরে ম্যানসিটির জার্সিতে ৪২১ ম্যাচ খেলে ১০৮ গোল করেছেন, করিয়েছেন আরও ১৭৭ গোল। এর মধ্যে লিগে ২৮৪ ম্যাচে গোল ৭২টি ও অ্যাসিস্ট ১১৯টি।

ডি ব্রুইনাকে বিদায় জানাতে আয়োজনের কমতি রাখেনি ম্যানসিটি। এদিন ইতিহাদের আলো নিভিয়ে পর্দায় দেখানো হয় তার ক্যারিয়ারের স্মরণীয় মুহূর্তগুলো। এরপর সেই অন্ধকার পথ ধরে সপরিবারে হেঁটে আসেন ডি ব্রুইনা। ডি ব্রুইনাকে অভিবাদন জানাতে মঞ্চের দুই পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্লাবের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা।

তবে আসল চমকটা অন্য জায়গায়। ক্লাবের ইতিহাসের সেরা প্লেমেকারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার ভাস্কর্য বানানোর ঘোষণা দিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ। ইতিহাদের বাইরে ডি ব্রুইনার এই ভাস্কর্য শোভা পাবে।

দর্শক-সমর্থকদের বিদায় জানাতে গিয়ে এদিন আবেগতড়িত হয়ে পড়েন ডি ব্রুইনা। তিনি বলেন, ‘আমি সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে খেলতে চেয়েছি, আবেগ ঢেলে দিয়ে খেলতে চেয়েছি। আমি ফুটবলকে উপভোগ করতে চেয়েছি এবং আমার মনে হয় সয়াই এটা উপভোগ করেছেন। ক্লাবের ভেতরের ও বাইরের সবাই সবসময় চেষ্টা করেছে আমার থেকে সেরাটা বের করে আনতে এবং আমার সামনে থাকা এই মানুষরাই আমাকে আগের চেয়ে সেরা করে তুলেছে। এই মানুষদের সঙ্গে খেলাটা সম্মানের। আমি জীবনের সেরা বন্ধুদের পেয়েছি।’

ডি ব্রুইনার বিদায়ে বুক ভেঙেছে গুরু গার্দিওলারও, ‘সবাই দেখেছে ম্যানচেস্টার সিটির মানুষজন তার ও তার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কে আবদ্ধ এবং কতটা ভালোবাসে। সে যা কিছু অর্জন করেছে এবং শিরোপাগুলো দারুণ, কিন্তু আপনি যখন ১০ বছর পর এই পরিমাণ সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে ছেড়ে যাবেন, এর চেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারে না।

আগামী রোববার (২৫ মে) ক্রাভেন কটেজে ফুলহ্যামের বিপক্ষে লিগ মৌসুমের শেষ ম্যাচ খেলবে ম্যানচেস্টার সিটি। এরপর ১৮ জুন ওয়াদাদ এসির বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে মিশন শুরু করবে ম্যানসিটি। এই টুর্নামেন্ট অবশ্য ডি ব্রুইনাকে দলে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।