৪০ দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের ভোট নিশ্চিতে কার্যক্রম শুরু করেছে ইসি

SHARE

বাংলাদেশের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে তৎপরতা বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তিনটি সম্ভাব্য পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি, যার মধ্যে ‘প্রক্সি ভোটিং’ পদ্ধতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে এই উদ্যোগ কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় সংশয় দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত ও মালয়েশিয়াসহ সাতটি দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অনলাইনে আবেদন করার পর প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে গিয়ে ছবি ও বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে হচ্ছে। এছাড়া কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরে এই কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এসব দেশ থেকে প্রাপ্ত আবেদন সংখ্যা ৪২ হাজার ২৬৯টি। এর মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছে ৩ হাজার ৪০১টি আবেদন। তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ২০ হাজার ১৮৪টি এবং ১৭ হাজার ৬০৭টি আবেদন ইতোমধ্যে অনুমোদন পেয়েছে। আঙুলের ছাপ ও ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে ২২ হাজার ১২৮ জন প্রবাসীর। সবচেয়ে বেশি আবেদন এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে— ১৮ হাজার ৫৮৯টি; আর সবচেয়ে কম আবেদন পাওয়া গেছে মালয়েশিয়া থেকে—৭৮৪টি।

ইসি ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী বসবাস করেন। এর মধ্যে সৌদি আরবেই রয়েছেন প্রায় ৪০ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ওই দেশগুলোতেই পর্যায়ক্রমে ভোটার তালিকাভুক্তির কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে বাস্তবতা অনেকটাই জটিল। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বৈধ কাগজপত্রের অভাব। অনেক প্রবাসীর বৈধ পাসপোর্ট না থাকায় তাদের আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। আবার অনেকেই নিরক্ষর, অথবা কর্মস্থলের দূরত্বের কারণে দূতাবাসে গিয়ে নিবন্ধন করতে পারছেন না। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে কর্মরত প্রবাসীরা রিমোট এলাকাগুলোতে কাজ করেন, যেখান থেকে দূতাবাসে গিয়ে সময়, অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে ভোটার হওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, “প্রবাসীদের অনেকেই হয়তো ভোটার হতে চান, কিন্তু তাদের কাজের চাপ, অবস্থান এবং কাগজপত্রের জটিলতা বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”

ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, “আমরা যেসব দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছি, সেখানে দূতাবাসের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কাজ করা হচ্ছে। তারা নির্ধারিত ফি নিয়ে ছবি তোলা, চোখের আইরিশ ও আঙুলের ছাপ গ্রহণ করছে। এরপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানার উপজেলা নির্বাচন অফিস তদন্ত করে তথ্য যাচাই করছে।”

তিনি জানান, বৈধ কাগজপত্র থাকলেই প্রবাসীরা সহজেই ভোটার হতে পারবেন এবং এনআইডি পেয়ে যাবেন। একইসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, যারা দেশ থেকেই এনআইডি সংগ্রহ করেছেন, তারা ইতোমধ্যেই ভোটার হয়েছেন। এ ছাড়া যারা এখনও হননি, তাদের জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতে সম্প্রতি প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো পদ্ধতি গৃহীত হয়নি, যা দিয়ে প্রবাসীরা কার্যকরভাবে ভোট দিতে পারেন। এই বিষয়টি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারে।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, “প্রবাসী ভোটার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ভোটাধিকার প্রয়োগের উপযুক্ত পদ্ধতি নির্ধারণে তিনটি পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে প্রবাসীদের মধ্যে এনআইডি সরবরাহের উদ্দেশ্যে প্রথম উদ্যোগ নেয় নির্বাচন কমিশন। সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়ায় এ কার্যক্রম শুরুর পর করোনা মহামারির কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। ২০২২ সালে বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বে আবারও উদ্যোগটি চালু হয় এবং বর্তমানে তা আরও বিস্তৃতভাবে বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগের সফলতা নির্ভর করছে কার্যকর বাস্তবায়ন, সংশ্লিষ্ট দেশের সহযোগিতা, প্রবাসীদের সচেতনতা এবং সর্বোপরি একটি সহজ ও বিশ্বাসযোগ্য ভোটদান প্রক্রিয়া নির্ধারণের ওপর। ভোট শুধু নাগরিক অধিকার নয়, এটি গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড— আর প্রবাসী বাংলাদেশিরাও তার অংশ।