অভিনয় জগতে সাহসী ও শক্তিশালী নারীর চরিত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অভিনেত্রী অদিতি পোহনকার। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ‘শি’ এবং ‘আশ্রম’ সিরিজে তাঁর অভিনয় প্রশংসা কুড়িয়েছে দর্শক-সমালোচক উভয়ের কাছ থেকে। তবে পর্দার এই সাহসী নারীর জীবন বাস্তবেও কম চ্যালেঞ্জিং নয়। সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অদিতি নিজের জীবনের দুটি ভয়ংকর যৌন হেনস্থার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, যেগুলো তিনি সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন।
অদিতি জানান, প্রথম ঘটনা ঘটে তাঁর শৈশবে, যখন তিনি মাত্র পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তেন। মুম্বাইয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট বাস ব্যবহার করতেন তিনি। কিন্তু এক সময় থেকে তাঁকে সাধারণ গণপরিবহন ব্যবহার করে স্কুলে যেতে বলা হয়। একদিন বাসে ওঠার পর তাঁর মায়ের এক ছাত্র, যাকে তিনি ‘দাদা’ বলে ডাকতেন, বিকৃত মনোভাব নিয়ে আচরণ করে। অদিতি বলেন, “সে নিজের ব্যাগ সরিয়ে এমনভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল যেন আমাকে ওর গোপনাঙ্গ দেখতে বাধ্য করে। প্রথমে আমি হাসলেও পরে বুঝতে পারি ওর উদ্দেশ্য ঠিক নয়। সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করি—এই লোকটা আমাকে খারাপ কিছু দেখাচ্ছে। ও এতটাই চমকে গিয়েছিল যে, প্যান্টের চেন আটকাতে না পেরে চলন্ত বাস থেকেই লাফ দেয়।” বাড়ি ফিরে ঘটনাটি জানালে, তাঁর মা এই সাহসিকতার জন্য তাকে পিঠ চাপড়ে উৎসাহ দেন।
দ্বিতীয় অভিজ্ঞতাটি ঘটে মুম্বাইয়ের লোকাল ট্রেনে, যখন তিনি একাদশ শ্রেণিতে পড়ছিলেন। ট্রেনের মহিলা কামরায় স্কুল ইউনিফর্মে থাকা ১৮ বছরের কম বয়সী ছেলেরা উঠতে পারত। একদিন এক ছেলে ওই কামরায় উঠে ট্রেন ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অদিতির গায়ে হাত দেয়। তিনি বলেন, “স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়েই ছেলেটা আমার স্তন আঁকড়ে ধরেছিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে পরের স্টেশনে নেমে গিয়ে পুলিশকে জানাই।” পুলিশ ছেলেটিকে চিহ্নিত করতে বললে তিনি তৎক্ষণাৎ শনাক্ত করেন এবং ঘটনাটি বিস্তারিত বর্ণনা করেন। প্রথমে ছেলেটি অস্বীকার করলেও পরে পুলিশের চাপ এবং অদিতির দৃঢ়তায় নিজের দোষ স্বীকার করে নেয়।
এই দুটি অভিজ্ঞতা অদিতির জীবনে যেমন গভীর প্রভাব ফেলেছে, তেমনি তাঁকে করে তুলেছে আরও শক্তিশালী, আরও সচেতন। পর্দায় যে দৃঢ়চেতা নারী চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন, বাস্তবেও সেই সাহস তাঁর প্রতিটি অভিজ্ঞতায় প্রতিফলিত হয়।
বর্তমানে ওয়েব সিরিজে অদিতি পোহনকার এক পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য নাম। বিশেষ করে ‘আশ্রম’ সিরিজে তাঁর চরিত্র ও অভিনয় তাঁকে অভিনয়জগতে একটি শক্ত অবস্থান এনে দিয়েছে। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, একজন নারীর আত্মরক্ষা ও প্রতিবাদের শক্ত কণ্ঠস্বর হিসেবেও তিনি হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণা। অদিতির অভিজ্ঞতা এটাই প্রমাণ করে—প্রতিবাদ কখনোই দুর্বলতা নয়, বরং তা পারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বড় শক্তি হয়ে উঠতে।