সীমান্তে মৃত্যু থেমে নেই: পাঁচ বছরে বিএসএফের গুলিতে নিহত ১৫১ বাংলাদেশি

SHARE

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রাণহানির ঘটনা থামছে না। গত পাঁচ বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর হাতে অন্তত ১৫১ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশের প্রখ্যাত মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এই নিহতদের মধ্যে রংপুর বিভাগেই প্রাণ হারিয়েছেন ৬১ জন।

সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, রংপুর বিভাগের ছয়টি জেলার মধ্যে লালমনিরহাটে প্রাণহানির ঘটনা সবচেয়ে বেশি। শুধুমাত্র এই জেলাতেই ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিএসএফের গুলিতে ১৯ জন নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ প্রাণঘাতী ঘটনার শিকার হয়েছেন হাসিবুল ইসলাম নামের এক যুবক, যিনি গত ১৭ এপ্রিল সিংগীমারী সীমান্তে ঘাস কাটতে গিয়ে ভারতীয় অংশে বিএসএফ সদস্যদের হাতে ধরা পড়েন। পরিবারের অভিযোগ, তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে।

হাসিবুলের মা জানিয়েছেন, “ওদের রাইফেলের মাথা দিয়ে বুক খুঁচিয়ে ছেলেকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। তারপর আটার বস্তার মতো গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে।”

এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই দেশে প্রতিবাদ চলছে। ২০১১ সালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যাকাণ্ডের পর সীমান্ত হত্যা নিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও নিহতদের পরিবার যেমন বিচার পায়নি, তেমনি সীমান্তে মানুষের জীবনও নিরাপদ হয়নি।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ত্বহা হুসাইন বলেন, “দুই দেশের মধ্যে যেসব সীমান্ত চুক্তি রয়েছে, সেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে—যদি কেউ অনুপ্রবেশ করে, তবে তাকে আটক করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, কিন্তু প্রাণহানি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি আরও বলেন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় যে ধরনের মানবিকতা ও আন্তঃদেশীয় সমন্বয়ের প্রয়োজন, তার অভাবই এ ধরনের ঘটনার পেছনে মূল চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজিবির অবস্থান
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)-এর ১৫ ব্যাটালিয়নের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম জানান, “সীমান্তের জিরো লাইনের ১৫০ গজের মধ্যে কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে এবং আমাদের নাগরিকরাও যাতে তা অতিক্রম না করেন, তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “সীমান্তে উত্তেজনা বা ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে নিয়মিত পতাকা বৈঠক হয় এবং আমরা প্রতিটি ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।”

মানবিক ও কূটনৈতিক সমাধানের তাগিদ
বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীদের মতে, সীমান্ত এলাকায় মানবাধিকার রক্ষায় কেবল প্রতিরক্ষা নয়, প্রয়োজন কূটনৈতিক সদিচ্ছা ও যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার প্রতি দায়বদ্ধতা। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উভয় দেশকে আরও স্বচ্ছ ও মানবিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রতিনিয়ত এই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন নিরীহ গ্রামবাসী, যাদের জীবন জীবিকা সীমান্তের কাছাকাছি। একটি নিরাপদ ও মানবিক সীমান্ত নীতি সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।