আজ (শনিবার) জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হবে। গত রাতে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। গত রাত ৮টার পর থেকেই বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও অনলাইন বার্তা সংস্থাগুলো শুক্রবার রাতেই কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার ‘তথ্য’ জোরালোভাবে প্রচার করলে দেশজুড়ে অপেক্ষার পালা শুরু হয়। রাত ১০টার দিকে সূত্রগুলো জানায়, শুক্রবার রাতে ফাঁসি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম। অবশ্য গতকাল রাতেই মঞ্চ ফাঁসির জন্য প্রস্তুত করা হয়। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না_ কামারুজ্জামান তা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকেই অনিশ্চয়তার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। স্বীয় আইনজীবীদের সঙ্গে ‘পরামর্শ’, ‘ভেবে দেখা’র কথা বলে তিনি যে কালক্ষেপণের কৌশল অবলম্বন করছেন তা স্পষ্ট হয়ে উঠলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল গতকাল গণমাধ্যমকে একাধিকবার জানান, কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাভিক্ষা চাননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র রাতে জানায়, ফাঁসি কার্যকরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু প্রক্রিয়া এখনও বাকি রয়েছে। সেটি আজ শনিবার সম্পন্ন হতে পারে। এ ছাড়া কামারুজ্জামানের সঙ্গে তার স্বজনের ‘শেষ সাক্ষাতের’ বিষয়টিও রয়েছে। আজ কামারুজ্জামানের স্বজনদের কারাগারে ডাকা হতে পারে। এই দুই বিষয় সম্পন্ন হওয়ার পর কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।
কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল গতকাল রাতে বলেন, ‘বাবার সঙ্গে সাক্ষাতে কারা কর্তৃপক্ষ এখনও তাদের ডাকেনি। তবে ডাকলে আমরা যেতে প্রস্তুত রয়েছি।’ গত সোমবার কামারুজ্জামানের স্বজনরা তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কারাগারে যান। ওই সময় স্বজনদের অনেকে কামারুজ্জামানকে আলিঙ্গন করতে
আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন কারা কর্তৃপক্ষ তাদের জানান, ‘আপনারা আবার দেখা করার সুযোগ পাবেন।’
গতকাল সকালে কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব জামিল ও তানভীর মোহাম্মদ আজিম। এক ঘণ্টার বেশি কারাগারে অবস্থানের পর বেলা ১১টা ৩৭ মিনিটে ম্যাজিস্ট্রেটরা বেরিয়ে যাওয়ার সময় কারাফটকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে তারা কোনো কথা বলেননি। ম্যাজিস্ট্রেটরা বেরিয়ে যাওয়ার পর কারাফটকের সামনে আসেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী। অপেক্ষমাণ সাংবাদিকরা কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে কামারুজ্জামানের কী কথা হয়েছে_ এমন প্রশ্নে কারা তত্ত্বাবধায়ক কেবল দুটি শব্দ বলেন_ ‘নো কমেন্টস’।
দায়িত্বশীল সূত্র জানান, দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে কনডেম সেলে থাকা কামারুজ্জামান প্রথমে কয়েক মিনিট ‘চুপচাপ’ থাকেন। এর পর নীরবতা ভেঙে ভাবনার জন্য আরও কিছু সময় চান। তবে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় ম্যাজিস্ট্রেটরা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে স্বজনদের সঙ্গে তাকে আরেকবার সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হবে। ‘শেষ ইচ্ছা’র ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাওয়া হবে। শুক্রবার আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন, ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দার, সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলীসহ কারা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন।
যে ফাঁসির মঞ্চে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হবে, সেখানে গতকাল রাতে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। ওপরে সাদা কাপড়ের শামিয়ানা ও ত্রিপল লাগানোরও ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। জল্লাদদের ১০ জনের একটি প্যানেল প্রস্তুত রয়েছে। ফাঁসি কার্যকরের আগে চূড়ান্তভাবে একজন জল্লাদকে নির্বাচন করা হবে। গতকাল সন্ধ্যার পর কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কারাগারের সামনে রাত ১০টা পর্যন্ত গণমাধ্যম কর্মী ও উৎসুক মানুষের বেশ ভিড় ছিল।