‘সেই ৫ জানুয়ারির ভূমিকাতেই ইসি’

SHARE

nazrulবিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গত বছরের সেই ৫ জানুয়ারি নির্বাচনী প্রহসনে যেমন ফরমায়েসি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রেখেছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তেমনটি করছে। মূলত বিএনপির কৌশলের কাছে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য তারা নিজেদের প্রার্থীকে যেকোনোভাবে বিজয়ী করতেই প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে বিএনপির বিরুদ্ধে মাঠে নামিয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন দলের সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি।

নজরুল ইসলাম খান বলেন “দেশের প্রচলিত আইনে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ স্থানীয় সরকারের কোন পদে নির্বাচনের জন্য কোন রাজনৈতিক দল কাউকে মনোনীত করতে পারে না এবং সরকারী পদধারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা  এসব নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না।”

“অথচ দেশবাসী অবাক বিস¥য়ে লক্ষ্য করেছেন যে, মন্ত্রী সভার বৈঠকে দেশের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আনিসুল হকের প্রতি তার সমর্থন ঘোষণা করেছেন এবং  পরে তার সরকারী বাসভবনে দলীয় সভায় তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এই নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অনিয়ম পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশন না শোনা, না জানা ও না বোঝার ভান করে নিন্দা কুড়ালেও লজ্জিত হয়েছে বলে মনে হয় না।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “বরং প্রধানমন্ত্রীর এই পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা দিতে সামান্য এক ত্রুটি দেখিয়ে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছে। নামে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও বর্তমান বশংবদ নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনী প্রহসনে যেমন ফরমায়েসি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা পালন  করে বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হয়েছে- এবারও তারই পুনরাবৃত্তি শুরু করেছে।”

নজরুল ইসলাম খান বলেন, “যেদিন আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়ন পত্রে সমর্থনকারীর বিষয়ে প্রশ্ন তুলে মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়েছে সেই একই দিনে মনোনয়ন পত্রের ছোট খাট ভুল সংশোধনের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার প্রার্থীদের কয়েক ঘণ্টা সময় দিয়েছেন। ঢাকায়ও তেমন সুযোগ দিলে মিন্টু ওই নির্বাচনী এলাকার লক্ষ লক্ষ সমর্থকের মধ্য থেকে একজনকে সমর্থক হিসাবে দেখাতে পারতেন।”

“অন্যদিকে মিন্টুর সমর্থনকারী ঢাকা মহানগরের বাসিন্দা হিসেবে প্রয়োজনীয় সব প্রমাণ হাজির করা সত্বেও আপিল নিস্পত্তির দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা তা আমলে না নিয়ে মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখায় মিন্টুকে উচ্চ আদালতে যেতে হয়েছে।”

বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, “বিরোধী দল সমর্থক জনপ্রিয় বহু প্রার্থীকে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা কিভাবে নমিনেশন পেপার কিনতে বাধা দিয়েছে, নমিনেশন পেপার কেনার অপরাধে হেনস্তা করেছে এবং নমিনেশন পেপার জমা না দেয়ার জন্য অন্যায়ভাবে চাপ দিয়েছে। মিরপুরের এক মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নপত্র কেনার পর বাসায় তাকে না পেয়ে তার স্বামীকে নির্দয় নির্যাতন করে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, “এ ধরণের কর্মকান্ডের উদ্দেশ্য হলো সরকার দলীয় প্রার্থীদের যেকোনভাবে বিজয়ী করা। এসব ব্যাপারেও নির্বাচন কমিশন স্বজ্ঞানে নিশ্চুপ হয়ে আছে। নানা মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর বিএনপি ও ২০ দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে আটক, পায়ে গুলি করে পঙ্গু কিম্বা আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে।”

“বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদকে গুম করে নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করার সুযোগে সরকার শুণ্য মাঠে গোল দেয়ার উদ্দেশ্যে হঠাৎ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু বিএনপি ও ২০ দলের কৌশলী সিদ্ধান্তের ফলে গোটা পরিস্থিতি তাদের বিপক্ষে চলে যাওয়ায় এখন আজ্ঞাবহ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে মাঠে নামিয়েছে।”

গত ছয়টি সিটি কর্পোরেশনের চিত্র তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, “সেসব নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় প্রমাণ করেছে যে জনগণ মোটামুটি শান্তিপূর্র্র্ণ পরিবেশ পেলে খুন, গুম এবং জনগণের অধিকার ও অর্থলুটকারী সরকারের সমর্থক প্রার্থীদের ভোট দেবে না। সেকারণেই সরকার বিরোধী দলের প্রার্থীদের ওপর অত্যাচার করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে এবং সর্বশেষ জনাব মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিলের হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন করে সংকট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়।”

অবিলম্বে এসব অপতৎপরতা থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান নজরুল ইসলাম।